বাংলার প্রতিচ্ছবি : ইসরাইলের সাম্প্রতিক ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পরমাণু আলোচনা বাতিল করা হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি এক্স (সাবেক টুইটার)–এ এক পোস্টে জানান, রোববারের ষষ্ঠ দফার পরোক্ষ আলোচনা এখন আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ কূটনীতি ও সংলাপ।
এই আলোচনা বাতিল হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আলোচনায় আগ্রহী বলে জানিয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখনো আলোচনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আশা করি ইরান শিগগিরই আলোচনায় ফিরবে।
শুক্রবার ইসরাইল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এতে নিহত হন ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, বিপ্লবী গার্ডের প্রধানরা ও পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। ইরানের মতে, এই হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হন।
ইসরাইল জানায়, তারা ইরানজুড়ে ৪০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যার মধ্যে অন্তত ৪০টি লক্ষ্য ছিল রাজধানী তেহরানে। ইসরাইলি বিমান বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ গভীরতায় প্রবেশ করে এই হামলা চালিয়েছে বলে জানানো হয়।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, খামেনি যদি ইসরাইলের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া চালিয়ে যান, তবে তেহরান জ্বলবে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আমাদের হামলার আসল রূপ এখনো ইরান উপলব্ধি করতে পারেনি। সামনে তারা আরও বড় পরিণতি দেখতে পাবে।
ইরানি পাল্টা হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সহায়তা
ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এতে জেরুজালেম ও তেল আবিবের আকাশে রাতভর বিস্ফোরণ ও আলোর ঝলকানি দেখা যায়। ইসরাইল জানিয়েছে, এই হামলায় তিনজন নিহত ও ১৭৪ জন আহত হয়েছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার গ্রাউন্ড-বেইজড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সাহায্য করেছে।
ইসরাইল জানিয়েছে, তারা ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র নাতানজ এবং গবেষণা স্থাপনা ইসফাহানে আঘাত হেনেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, নাতানজের অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, ইসফাহানে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা জানান, আমাদের হিসাব অনুযায়ী, নাতানজ ও ইসফাহানের ক্ষতি মেরামত করতে ইরানের একাধিক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।
ইরান বলছে আলোচনা এখন অন্যায্য!
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ইসরাইলি হামলার প্রেক্ষাপটে এখন পারমাণবিক আলোচনা সম্পূর্ণভাবে অন্যায্য। 
তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কাল্লাসের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের এই হামলা ‘ওয়াশিংটনের সরাসরি সমর্থনের ফল।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নয়।
শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানকে এখনই চুক্তি করতে হবে, নইলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
ইরানের সরকারি ঘনিষ্ঠ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, একটি ইসরাইলি ড্রোন দক্ষিণ পারস্যের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টে আঘাত হানে, যাতে প্রবল বিস্ফোরণ ঘটে। এটি যদি নিশ্চিত হয়, তবে এটিই হবে ইরানের জ্বালানি খাতে ইসরাইলের প্রথম হামলা।
এই হামলায় নিহত হন ইরানের তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা—সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি, বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং গার্ডের মহাকাশ বিভাগপ্রধান জেনারেল আমির আলি হাজিজাদে। পরদিনই এই বিভাগে নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান জেনারেল মজিদ মোসাভি।
                            
                         
                         
                             
  
                             
                                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                