ঢাকা | ২৮ জুন ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক, এলো তিন সিদ্ধান্ত

প্রকাশের তারিখ: জুন ২৭, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : সংস্কার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয় সভা করেছে। এতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহারের নির্দেশনা, কর্মকর্তাদের বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনা ও আগামী মঙ্গলবার তিন পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে এই তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই সভায় সরকারের পক্ষ থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানিসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান করে কাজে মনোনিবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এবং সংস্থাটির ১৬ জন সদস্য অংশ নেন।

সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেগুলো হচ্ছে: 
১. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা। 
২. এনবিআরের ইস্যু করা কর্মকর্তাদের দুটি সাম্প্রতিক বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা।
৩. আগামী মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল ৪টায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে রাজস্ব বোর্ড সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং এনবিআরের সদস্যদের সভা হবে। এতে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার প্রত্যাশা করে, মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় সভায় আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব হবে।

সারা দেশে রাজস্ব সংগ্রহ করে এনবিআর। মূলত তাদের সংগৃহীত রাজস্ব দিয়েই সরকার চলে। এনবিআরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। সরকারের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় ১২ মের পর থেকে আন্দোলন চলছে।

এনবিআরের সংস্কারে সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সংস্থাটিতে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠনের কথা জানিয়ে সরকার গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে। এর উদ্দেশ্য হলো, করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার একটি শর্ত ছিল রাজস্বনীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা গঠন করা।

এনবিআরের কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে তেমন আপত্তি করছেন না। তবে তাঁরা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগও দাবি করছেন। তাঁদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি এবং এতে সংকট তৈরি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকামুখী ‘মার্চ টু এনবিআর’ শীর্ষক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘এ মুহূর্তে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া সংস্কারের আর কোনো পথ খোলা নেই। আমরা এনবিআর সংস্কারের পক্ষে। তবে তা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। নিপীড়নমূলক বদলির আদেশ বাতিল করতে হবে।’
কমেন্ট বক্স