ঢাকা | ২৫ জুন ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন আমিনুল গনি

প্রকাশের তারিখ: জুন ২৫, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনি (টিটু)। তাঁর জায়গায় মো. আমির হোসেনকে এই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় আমিনুল গনি দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনে সম্মতি দেন।

শুনানির শুরুতে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর উপস্থিতি জানতে চান। তখন আমিনুল গনি ডায়াসে উঠে দাঁড়ান। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, ‘আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকতে চান কি না, তা পুনর্বিবেচনা করুন।’

জবাবে আমিনুল গনি বলেন, তিনি মামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। প্রসিকিউটরের পর যুক্তি উপস্থাপন করতে চান। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বলেন, ‘এই ক্লায়েন্টের (শেখ হাসিনা) ওপর আপনার মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। এখন আপনি তাঁকে ডিফেন্ড (শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে যুক্তি তুলে ধরা) করতে চাচ্ছেন, এটা মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে।’

নিজের যুক্তি তুলে ধরে আমিনুল গনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে তিনি যে সৎ, তা তিনি প্রমাণ করতে চান।

এ পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যের পর শেখ হাসিনার মামলায় আমিনুল গনির রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকার বিষয়টি এথিক্যাল (নৈতিকতার) ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন বলে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপর আমিনুল গনি বলেন, এথিক্যালি তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকতে পারেন না। কিন্তু তাঁকে এখানে সম্পৃক্ত করা হলো কেন, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। এ সময় ট্রাইব্যুনাল আমিনুল গনিকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি শেখ হাসিনাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন?

জবাবে আমিনুল গনি তা স্বীকার করেন। তবে বলেন, তিনি আইনজীবী হিসেবে সৎ, এটা প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হোক।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, তিনি (আমিনুল গনি) ভালো আইনজীবী। তাঁদের (ট্রাইব্যুনালের) আরও বিষয় আছে। সেখানে তাঁকে (আমিনুল গনি) দরকার হবে।

এরপর আমিনুল গনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করেন।

পরে আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে এ মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় প্রসিকিউশন।

সম্প্রতি আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে ‘স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল’ (রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ ওঠে, আমিনুল গনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়েছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড থাকতে হবে, যাতে তিনি যথাযথ ও স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের সামনে আসামির প্রতিনিধিত্ব করেন।

এর এক দিন পরই আজ শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন আইনজীবী আমিনুল গনি।
কমেন্ট বক্স