বাংলার প্রতিচ্ছবি : সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা হিসাবে)।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দেশটির ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের প্রকাশিত বার্ষিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
এসএনবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের নামে জমা ছিল মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ, যার পরিমাণ তখনকার বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা। সেই তুলনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশিদের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ।
২০২২ সালের শেষে এ পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা। ফলে ২০২৩ সালে যেখানে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে, ২০২৪ সালে সেখানে রেকর্ড উত্থান হয়েছে।
সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা অর্থের বড় একটি অংশ দেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা হিসেবে বিবেচিত, যা মূলত বাণিজ্য লেনদেন সংক্রান্ত বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই অর্থের ৯৫%-এর বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর নামে রয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সুইস ব্যাংকে থাকা এই বিপুল অর্থের একটি অংশ অবৈধ পথে পাচার হওয়া সম্পদ হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একাধিকবার সুইজারল্যান্ডের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (এফআইইউ) সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, কোনো ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ বিশদ তথ্য তারা পায়নি।
সুইস কর্তৃপক্ষ বলেছে, কারও বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের যথাযথ প্রমাণ সরবরাহ করা হলে, তারা তদন্ত এবং তথ্য আদান-প্রদানে সহযোগিতা করতে পারে।
বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। যদিও বিদেশি অর্থের তথ্যের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে এখন ছাড় দিচ্ছে সুইজারল্যান্ড।
কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, সেটির একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।