ঢাকা | ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ

প্রকাশের তারিখ: এপ্রিল ১২, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। দেশটির অন্যতম প্রধান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী (জেআই)-এর ডাকে আয়োজিত এই বিক্ষোভে মুসলিম দেশগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর সহিংসতা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব জেরুজালেমকে (আল-কুদস আল-শরিফ) রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে এবং ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি।

লাহোরে এক বিশাল সমাবেশে জামায়তে ইসলামীর আমি হাফিজ নাঈমুর রহমান বলেন, এই দখলদার ভূখণ্ডকে মুক্ত করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। ব্যক্তিগতভাবে পথ বন্ধ থাকলে, এই দায়িত্ব মুসলিম শাসকদের ও তাদের সেনাবাহিনীর।

তিনি আরও বলেন, একটি ছোট পদক্ষেপও যুদ্ধবিরতির পথে নিয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তান ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার ঐতিহাসিক ও আদর্শিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রহমান বলেন, ১৯৪৮ সালে যখন ইসরাইলকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হলো, তখন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, ইসরাইল পশ্চিমা শক্তির তৈরি একটি অবৈধ সন্তান।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তানের জাতীয় কবি ও দার্শনিক ড. মোহাম্মদ ইকবাল ১৯৩১ সালে ফিলিস্তিনে একটি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন— যা ফিলিস্তিনের প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

রহমান বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে বলা হয়েছে— আমরা ইসরাইলকে কখনোই স্বীকৃতি দেব না।  কেউ যদি গোপনে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলেন কিংবা ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই— একটাই রাষ্ট্র আছে, সেটা হলো ফিলিস্তিন, এবং সেটা বর্তমানে দখলাধীন।

তিনি বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর ওপর গণচাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনার সরকারকে জনগণের প্রতিবাদের মাধ্যমে চাপ দিন।  বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা— সর্বত্র বিক্ষোভ চলছে। এই প্রতিরোধের আগুন নিভতে দেবেন না।

জামায়াত ইসলামীর আমির জানান, তিনি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। 

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শিগগিরই আমরা পাকিস্তানজুড়ে পূর্ণ ধর্মঘটের ডাক দেব। আমরা কখনোই নির্যাতনকারীদের পক্ষে নই। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ জাতিসংঘ সনদের অধীনে বৈধ।

তিনি বাণিজ্যিক মহল ও সাধারণ জনগণকে ইসরাইলি ও পশ্চিমা পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। 

এদিকে করাচির গুলশান-ই-ইকবালের বায়তুল মুকাররম মসজিদের সামনে শত শত মানুষ জমায়েত হন। সেখানে শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুনেম জাফর বলেন, গাজায় গণহত্যা থামেনি। জায়নিস্ট বাহিনী নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। গত ১৮ মাসে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ শহিদ হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি হামলায় গাজার ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

জাফর ঘোষণা দেন, আগামী ১৩ এপ্রিল করাচির শারাহ-ই-ফয়সাল সড়কে ‘গাজার সঙ্গে সংহতি’ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের কেন্দ্রীয় আমির হাফিজ নঈমুর রহমান।  

তিনি বলেন, আমরা মুসলিম শাসকদের বিবেক জাগাতে চাই। আমরা পরিবারসহ— শিশু, নারী ও বয়স্কদের অংশগ্রহণ কামনা করি।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইসরাইল-সমর্থনকারী কোম্পানির পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া দলটির ডাকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর করাচি ও পাকিস্তানের অন্যান্য শহরের বিভিন্ন মসজিদে শত শত প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমেন্ট বক্স