বাংলার প্রতিচ্ছবি : চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকা আইসিডিমুখী (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) ১ হাজার ৭৫৬ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার জমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, দেশীয় ও রপ্তানি শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যভর্তি এসব কনটেইনার আটকে থাকায় আমদানিকারকরা বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছেন। সরকার চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৬৮ কোটি টাকার রাজস্ব কম পেতে যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক পরিপত্রে জানিয়েছে, অতি প্রয়োজনীয় কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর অথবা পানিপথে নিয়ে পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাস করা যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলওয়ের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংকটে কনটেইনার পরিবহণ অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এর বিপরীতে আইসিডিমুখী কনটেইনারের পাহাড় জমেছে। অভিযোগ, ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর ‘অপ্রয়োজনীয় ও ‘অলাভজনক’ রুটে দুটি লোকোমোটিভ স্থানান্তর করার কারণেই এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। রমজানের আগে আমদানির চাপ বাড়ার বিপরীতে কনটেইনার পরিবহণ কমে যাওয়ার এর খেসারত আমদানিকারকের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দিতে হবে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, রমজানের আগে আমদানি পণ্য পরিবহণ নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়।
সূত্র জানায়, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার মালিকদের প্রত্যাশা ছিল-চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা কমলাপুর আইসিডি পর্যন্ত ফ্রেইট করিডর তৈরি করা হবে। আইসিডি পোর্ট ব্যবহার করে তাদের আমদানি পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত খালাস নিতে পারবে। কিন্তু কনটেইনার পরিবহণে বিলম্ব ও ধীরগতিতে সেই প্রত্যাশার ‘গুড়ে বালি’ পড়েছে। আইসিডিগামী কনটেইনার পরিবহণে ন্যূনতম ১০টি লোকোমোটিভ ও সমানুপাতে ক্যারেজ বা কনটেইনার বহনের অবকাঠামো প্রয়োজন। আছে মাত্র দুটি। বিগত সরকারের শেষ সময়েও প্রতিদিন অন্তত ২০০ কনটেইনার পরিবহণ করা হতো। এখন প্রতিদিন ১০০ বা তারও কম কনটেইনার পরিবহণ করা হচ্ছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নতুন কোনো ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ কেনা হচ্ছে না। পুরোনোগুলো অনেকটাই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। আইসিডিমুখী কনটেইনার পরিবহণ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটি তারাও ভাবছেন। এরই মধ্যে একটি লেকোমোটিভ বাড়ানো হয়েছে। রমজান সামনে রেখে পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আইসিডিমুখী কনটেইনারের চাপ বেড়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সামনে রমজান। স্বাভাবিকভাবে বর্তমানে যেসব কনটেইনার জমে গেছে, সেগুলোর পণ্য রমজানকেন্দ্রিক। তাই পণ্যভর্তি এসব কনটেইনার পরিবহণে ধীরগতি কাম্য নয়। ভোক্তাদের কথা চিন্তা করেই সরকারকে সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
রোববার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, রেলওয়েকে অনুরোধ করেছিলাম অন্তত চারটি লোকোমোটিভ দেওয়ার জন্য। কিন্তু দিয়েছে একটি। বর্তমানে তিনটি লোকোমোটিভ কনটেইনার পরিবহণ করছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানিকারকরা চাইলে আইজিএম সংশোধন করে পছন্দের বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস নিতে পারবেন।