ঢাকা | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

মায়ের চোখে জল, কাঁধে লাঙ্গল—এই কি আমাদের গ্রামের বাস্তবতা?

প্রকাশের তারিখ: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি :প্রিন্স মন্ডল অলিফ, চিতলমারি প্রতিনিধি: দারিদ্র্য, অসুস্থতা আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে প্রতিদিন যুদ্ধ করেই বেঁচে আছেন এক অসহায় মা। গোয়ালে নেই গরু, পকেটে নেই টাকা, তবুও জমিতে ধানের চারা রোপণ না করলে পরিবারের মুখে ভাত জুটবে না—এই বাস্তবতা তাঁকে বাধ্য করেছে নিজের কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল তুলে নিতে।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চর বানিয়ারি ইউনিয়নের উমোজুড়ি গ্রামের এই নারী (৪৫) নিজের দুই কিশোর সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই এক বিঘা জমি চাষে নেমেছেন। ক্লান্ত শরীর, ক্ষুধার্ত পেট আর ভাঙা মনে শুধু একটাই আশা—এই জমিতে ফসল ফললে অন্তত বছরটা না খেয়ে থাকতে হবে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “গরু নেই, টাকা নেই। তবুও জমি চাষ না করলে বাঁচবো কীভাবে? তাই ছেলেদের নিয়েই হাল ধরেছি। অনেক মানুষ কষ্টের পর সুখ পায়, কিন্তু আমার জীবনে আদৌ সুখ আছে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন।”

তিনি আরও বলেন, “সুখ থাকলে কি মা তার ছোট ছেলেদের নিয়ে লাঙ্গল টানে? ওদের বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দুই ছেলে—সুধাংশু বাড়ৈ (১৮) ও সজল বাড়ৈ (১৫)—স্থানীয় চরবানিয়ারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ওদের লেখাপড়া চালানোই এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।”

সহায়তার আশায় কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তাঁর। বলেন, “কেউ যদি সামান্য সহযোগিতা করে, তাহলে ছেলেদের পড়াশোনা আর সংসারটা একটু বাঁচাতে পারি। সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।”

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে  প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করেই নিজের জীবনের এই করুণ বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা কমলেশ চক্রবর্তী বলেন, “এই পরিবার আমাদের গর্ব, আবার আমাদের বিবেকের প্রশ্নও। অভাবের কারণে অনেক সময় এক বিঘা জমি চাষের খরচ জোগাড় করাই তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অথচ দুই সন্তান নিয়মিত স্কুলে পড়ে। এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের সবার দায়িত্ব।”

এই মায়ের জীবনসংগ্রাম যেন শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়—এটি গ্রামীণ বাংলাদেশে অসংখ্য অসহায় মায়ের নীরব কান্নার প্রতিচ্ছবি।
কমেন্ট বক্স