বাংলার প্রতিচ্ছবি: শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রধান আসামী ফয়সালের দুই সহযোগী মেঘালয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মূল সন্দেহভাজন যে দেশে নেই, অবশেষে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানাল পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফয়সাল ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। মেঘালয় পুলিশ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় তদন্তের অগ্রগতি জানাতে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, “মামলাটি তদন্তের শেষ পর্যায়ে রয়েছে, আশা করছি আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে আমরা চার্জশিট প্রদান করতে সক্ষম হব।”
তবে কেন হাদিকে হত্যা করা হল, সেই ‘মোটিভ’ সম্পর্কে এখানো নিশ্চিত নয় পুলিশ। নজরুল ইসলাম বলছেন, যেহেতু মূল সন্দেহভাজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি, মোটিভও এখনো জানা যায়নি।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গেল ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই ওই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর দুদিন পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর হাদির মৃত্যুর খবর আসে।
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটিতে ৩০২ ধারা যুক্ত হয়।
এদিকে ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাকে সহায়তাকারী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখকে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ।
তারা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা গেলেও পুলিশ এতদিন নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছিল না।
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, ঘটনাটি ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হওয়ায় আসামিদের শনাক্ত করার আগেই তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে যান।
“ফয়সাল ও আলমগীর প্রথমে ঢাকা থেকে সিএনজিতে করে আমিনবাজারে যায়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুরে ও পরে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছায়।
“সেখানে ফিলিপ নামে একজন তাদেরকে সীমান্ত পার করে পুত্তির নামে একজনের কাছে হস্তান্তর করে। তারপর সামি নামে আরেক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছে তাকে দেওয়া হয়। সামি তাদেরকে মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, “ইনফরমাল চ্যানেলে আমরা মেঘালয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সেখানে তারা পুত্তির ও সামিকে গ্রেপ্তার করেছে।”
হাদি হত্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন-মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ‘ভারতে পালাতে’ সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।
তদন্তে নেমে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।