বাংলার প্রতিচ্ছবি: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। খালেদা জিয়ার এই মৃত্যুকে “বর্তমানে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় একটি বড় ধাক্কা” বলেও মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় সজীব ওয়াজেদ জয় লেখেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে, যখন সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল ও বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টা চলছে, তখন তার এই চলে যাওয়া বাংলাদেশের উত্তরণের পথে এক গভীর প্রভাব ফেলবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “অতীতের নানা বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার শিকার হওয়া সত্ত্বেও, নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অসংখ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এবং দেশের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করেছেন। জাতি গঠনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” তবে তার মৃত্যু বর্তমানে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় একটি বড়ো ধাক্কা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সবশেষে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার অসংখ্য সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতিও আন্তরিক সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন রাজনীতিতে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসারত অবস্থায় দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের এই প্রয়াণে দেশের রাজনীতিতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং একটি যুগের অবসান। গণতন্ত্র, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও আপসহীন এক নেত্রী। এই রাজনীতিকের চলে যাওয়ায় রাজনীতির ময়দান হারালো এক শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর। এনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন. “বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে এবং বিএনপি নেতৃত্বের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।”
পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাঁর ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আশা করছি মহান আল্লাহ তার পরিবারের সদস্যদের এবং বিএনপির সবাইকে এই শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবেন।”
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
অবস্থার অবনতি হলে তার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পরিবারের সদস্যারা হাসপাতালে ছুটে যান। রাত ২টার পর এজেডএম জাহিদ হোসেন হাসপাতালের সামনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া ‘অত্যন্ত সঙ্কটকময়’ সময় অতিক্রম করছেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের বড় সময় কেটেছে রাজপথের আন্দোলনে। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন; তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কখনো তিনি হারেননি।