বাংলার প্রতিচ্ছবি: বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (ইপিএ) খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্বের কোনও দেশের সাথে বাংলাদেশের এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক চুক্তি, যা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে সই করা হবে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নেগোসিয়েশন বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ তথ্য জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য ৯৭টি উপখাত উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২০টি উপখাতে ৪টি ‘মোডে’ সার্ভিস বা সেবা খাত উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “একটি ইন্টেন্সিভ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে আমরা জাপানের সঙ্গে ইপিএর চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছি। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আজ আমার ফোনে কথা হয়েছে। আগামী মাসে ইপিএ স্বাক্ষর হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের এটি প্রথম কোন অর্থনৈতিক চুক্তি। এ চুক্তির ফলে উভয় দেশের বিনিয়োগ আকর্ষিত হবে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে।”
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব বলেন, “আমরা ২০২৪ সালের শেষে এ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। আট দফা বৈঠক শেষে এখন চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এ ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি আমরা আগে কখনো করিনি, যে কারণে এ ক্ষেত্রে কি করতে হয়, সেটাও আমাদের সেভাবে জানা ছিল না। এই সরকারের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা সেটা পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো চুক্তি।”
উল্লেখ্য, চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের ৭,৩৭৯টি পণ্য জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বিপরীতে, জাপানের ১,০৩৯টি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে একই সুবিধা পাবে। এর ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কয়েক গুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, জাপানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এটা বিশ্বের অন্য দেশে জাপানের বিনিয়োগের তুলনায় খুব অল্প। আগে যখন আমরা জাপানের কাছে অধিক বিনিয়োগ চেয়েছি, তখন এ ধরনের (অর্থনৈতিক চুক্তি) কোন স্ট্রাকচার ছিল না বলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতো।”
তিনি বলেন, “আমাদের সব সময় ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু ভিয়েতনামের ৩০ দেশের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট আছে। আমরা মাত্র শুরু করছি। তবে যে যাত্রা শুরু হলো, আগামী সময়ে আরও অনেক অর্থনৈতিক চুক্তি করতে পারবো। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের জন্য সহজ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ দু-একটা ক্ষেত্রে ছিল, এখন অনেক খাতে সেটা বিস্তৃত হবে। বিশেষ করে লজিস্টিক, ইলেকট্রনিক্স, আইটি ও অটোমোবাইল খাতে বড়ো বিনিয়োগ আসবে। এর ফলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর আরও ত্বরান্বিত হবে।”
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই চুক্তি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর ফলে, বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ইপিএ হলো— দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা এফটিএ তৈরির একটি পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো, আমদানি কোটা সহজ করা এবং সেবার আদান-প্রদান বাড়িয়ে পারস্পরিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়।