প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি : ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এই চুক্তির ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১৫ বা ১৬ শতাংশ হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিন্ট এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে। খবর রয়টার্সের।
এই পদক্ষেপকে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এই ছাড়ের বিনিময়ে ভারত ধীরে ধীরে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের আমদানি কমিয়ে আনতে পারে।
এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তা কেবল দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, বরং এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সীমিত পরিসরের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল, তবে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে তা চূড়ান্ত রূপ পায়নি। বর্তমান আলোচনাটি সেই অচলায়তন ভাঙতে চলেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও উভয় পক্ষই এই স্পর্শকাতর আলোচনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সাধারণত বড় ধরনের কূটনৈতিক চুক্তির আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এমন নীরবতা পালন করে থাকে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) নিশ্চিত করেন যে, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প জানান, তাদের এই আলাপে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়টিই প্রধান্য পেয়েছে। দুই নেতার এই সরাসরি ফোনালাপ চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ইঙ্গিতকেই জোরালো করছে। ট্রাম্প আরও জানান, ফোনালাপে মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ সীমিত করবে।
ইউক্রেন সংকটের পর থেকে ভারত পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে ছাড়কৃত মূল্যে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে আসছে, যা ওয়াশিংটনের অস্বস্তির কারণ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে রাশিয়ার ওপর এই অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। দৃশ্যত বাণিজ্য শুল্ক কমানোর এই লোভনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে ওয়াশিংটন।
মোদিও টেলিফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে ঠিক কোন কোন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে তা হবে রাশিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ ভারত তাদের তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা।
মিন্ট-এর প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়েছে যে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির এই আলোচনায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু কৃষি পণ্য আমদানি বাড়াতে সম্মত হতে পারে। বিশেষত ভারত হয়তো ‘নন-জিএমও’ বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত হয়নি এমন ভুট্টা ও সয়াবিন কেনা বাড়াতে পারে।
ভারতের মতো বিশাল বাজারে মার্কিন কৃষি পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ছিল। এই চুক্তিতে একটি বিশেষ দিকও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; তা হলো, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর শুল্কের হার পুনর্মূল্যায়ন করা এবং উভয় দেশের বাজারে পণ্যের প্রবেশাধিকার ব্যবস্থা নিয়মিত পর্যালোচনা করার সুযোগ রাখা হবে।
এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা সহজ হবে। দুই দেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি মাসেই অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এই ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তিটির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে তা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্র হিসেবে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।