প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি : মার্কিন-মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় ১৫৩ টন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর মাধ্যমে তিনি কার্যত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের বিষয়টি স্বীকার করলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট ‘কনেসেট’-এর শীতকালীন অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ের মধ্যেই ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যদিও তখন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল, যা ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হাতে অস্ত্র, আর অন্য হাতে শান্তির জন্য প্রসারিত হাত।
দুর্বলদের সঙ্গে নয়, শক্তিশালীদের সঙ্গেই শান্তি স্থাপন করতে হয়। আজ ইসরায়েল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
নেতানিয়াহুর বক্তৃতা চলাকালীন বিরোধীদলীয় এমপিরা বারবার বাধা দেন। তিনি জানান, দুই ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর পরই এই বোমা হামলা চালানো হয়।
তবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই হামলার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা বা জ্ঞান থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, রাফাহ অঞ্চলে হামাস প্রথমে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়, যার জবাব হিসেবেই তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং কোনো আক্রমণ চালায়নি। এই পরস্পরবিরোধী দাবি স্পষ্ট করে দিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি কতটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ধাপে ধাপে পরিকল্পনার ভিত্তিতে। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ছিল জিম্মি ও বন্দি বিনিময় এবং পরবর্তী পর্যায়ে গাজার পুনর্গঠন ও হামাস-বহির্ভূত প্রশাসন গঠন। তবে বাস্তবে যুদ্ধ থামেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।