ঢাকা | ০৪ Jul ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়া কীসের লক্ষণ? সমাধান কী?

প্রকাশের তারিখ: Jul ৪, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ করে মাঝরাতে দম আটকে জেগে উঠলেন। শ্বাস নিতে পারছেন না, বুকটা ভারী ভারী লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন চেপে বসেছে। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হলেও সেই মুহূর্তের আতঙ্ক ভুলতে পারেন না।

এমনটা বারবার হলে বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই সমস্যার নাম স্লিপ অ্যাপনিয়া। এটি ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি সাধারণ অথচ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। আর এ সমস্যায় আপনি একা নন, বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন।

চলুন জেনে নিই এ অবস্থায় কী হয়, কেন এটি একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, এর লক্ষণগুলো কী কী এবং আরও অনেক কিছু।

স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি শারীরিক সমস্যা। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে এ সমস্যাটি বার বার হতে থাকলে ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়।

মূলত দুই ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে :
  • অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া : গলার পেশি শিথিল হয়ে শ্বাসনালি আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
  • সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া : মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় না।

কেন বিপজ্জনক?
দম আটকে ঘুম ভেঙে যাওয়া শুধু বিরক্তিকরই নয়; বরং এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে এতে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমে যায়। মানসিক অবসাদও দেখা দিতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যায় ভুগছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে যে কারও সাবধান হওয়া জরুরি।
  • মাঝরাতে দম বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঝিমুনি বা মাথাব্যথা
  • মনোযোগে ঘাটতি ও মুড সুইং
  • সকালে গলা শুকনো বা গলা ব্যথা
  • জোরে ও অনিয়মিত নাক ডাকা

এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
  • ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করুন : চিত হয়ে শুয়ে ঘুমালে শ্বাসনালি সহজে বন্ধ হয়ে যায়। তাই পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
  • ওজন কমান : ওজন বেশি থাকলে গলায় চর্বি জমে গিয়ে শ্বাসনারিতে চাপ পড়ে। এতে অ্যাপনিয়ার সমস্যা বাড়ে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এই দুটি উপাদান শ্বাসনালির পেশিকে শিথিল করে দেয়, যা দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ঘুমের অভ্যাস ঠিক করুন : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ও গাঢ় ঘুম গুরুত্বপূর্ণ শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য জরুরি।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিন : স্লিপ স্টাডি বা পলিসোমনোগ্রাফি করে এ সমস্যার মাত্রা নির্ণয় করা যায়। গুরুতর হলে সিপিএপি মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে ঘুমের সময় নাকের মাধ্যমে শ্বাসপ্রবাহ বজায় থাকে।
খেয়াল রাখবেন, দম বন্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতা মানসিকভাবে গভীর প্রভাব ফেলে। অনেকেই উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাকে ভোগেন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা থেরাপি গ্রহণ করতে দ্বিধা করবেন না।

ঘুম শুধু বিশ্রামের বিষয় নয়। এটি আমাদের শরীর ও মনের পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া। তাই ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়ার মতো লক্ষণকে হালকাভাবে না দেখে সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন। একে অবহেলা করলে পরবর্তী সময় তা আরও বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
কমেন্ট বক্স