বাংলার প্রতিচ্ছবি : ২০২৫ সালের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাতিল করায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ও ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’। একপর্যায়ে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র সদস্যরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পাহাড়ি আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এনসিটিবির সামনে অবস্থান নেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র সদস্যরা। পরে বেলা ১২টার দিকে পাহাড়ি ছাত্র ও জনতাদের একটি দল সেখানে পৌঁছালে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় পুলিশ দুপক্ষকে থামানোর চেষ্টা করলেও মানব ব্যারিকেড ভেঙে এনসিটিবির সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা।
‘আদিবাসী’ শব্দ রাখার পক্ষে আন্দোলনকারী বিভূতিভূষণ মাহাতো অভিযোগ করে বলেন, ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির সদস্যরা আগে থেকেই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা আমাদের হুমকিও দিয়েছিল এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য। তারা ক্রিকেট স্ট্যাম্পের মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রস্তুত ছিল হামলা করার জন্য।’
সংঘর্ষে ধনজেতরা (২৮), অন্তত ধামাই (৩৫), ফুটন্ত চাকমা (২২), ইসাবা শুহরাত (৩২), রেংইয়ং ম্র (২৭), রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা (২৫), ডোনায়ই ম্রো (২৫), শৈলী (২৭) ও ডিবিসি টিভির সাংবাদিক জুয়েল মারাকসহ (৩৫) পাহাড়ি ছাত্র-জনতার অন্তত ১৭ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাহাড়ি আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি অলিক মৃ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে সংঘর্ষের পরে আবারও এনসিটিবির সামনে অবস্থান নেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সদস্যরা। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ১৫ জনের মতো আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, আমরা বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গায় এখনও রয়েছি। আমরা তাদের ওপর হামলা চালাইনি। তারাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এসময় তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেরও অনেককেই দেখা গেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠন। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমাদের শাখা রয়েছে। আর যেহেতু এটি সার্বভৌমত্বের ইস্যু, তাই অনেকেই এখানে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আমি শুনেছি ১৩ থেকে ১৪ জন আহত হয়েছে। আদিবাসী পরিচয়ধারীদের বেশি আহত হয়েছেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে এনসিটিবি’র একজনও আহত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (পাহাড়ি) যদি এসে আমাদের বলতো, তাহলে আমরা তাদের কথাও শুনতাম। আগে একটি পক্ষ এসে আমাদের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছে। তারা এলে তাদের কথাও শুনতাম। অথচ একটি চক্রের ইন্ধনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।’