ঢাকা | ১২ অক্টোবর ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

অপ্রতিরোধ্য দূর্নীতিবাজ বিএডিসির পিডি নুরুল ইসলাম

প্রকাশের তারিখ: অক্টোবর ৯, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
পর্ব -১
প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিক ভাবে জড়িত। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারনে দুর্নীতির কবলে বিএডিসি। বিভিন্ন অনুসন্ধানে এমন চিএ এখন সবার সামনে উন্মুক্ত। বিএডিসির দুর্নীতি আর অনিয়মের অন্যতম হলেন প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম। তার নামে পাহাড়সম দুনীতি আর অনিয়মের অভিযোগ। 

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম। এই প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয় ৬০২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। যার ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের এডিবি বরাদ্দ ১৬৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পিডি হওয়ার সাথেসাথে পাল্টে যায় অর্থনৈতিক অবস্থান। 

পিডি হিসাবে নিয়োগের ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগ করেছে খোদ বিএডিসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে মোটা অংকের লেনদেনের ম্যধ্যমে তিনি পিডি নিয়োগ পান। 

তার অপরাধের শুরু আরো আগে থেকেই। নুরুল ইসলাম ২০২১ সালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং মন্ত্রনালয় ম্যানেজ করে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। তবে ক্ষমতার  অপব্যবহার করে অতি মাত্রায় দুনিতির জন্য মাত্র চার মাসের মাথায় একই বছরের ২০ জুন দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে কাজ দেওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের নেতাদের যোগসাজেশে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ এবং প্রকল্প পরিচালক হয়ে নিজেই প্রকল্পে গাড়ি সরবরাহ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রামানিত হয়। 

এই অপরাধের শাস্তি হিসাবে এরপর তাকে হবিগঞ্জ অঞ্চলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তবে সেখানেও গিয়েও অনিয়মে জড়ান নুরুল ইসলাম। বর্তমানের হবিগঞ্জ অফিস ভবনের কাজ তখন চলমান ছিল।  সেখানে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের নজরে এলে পুরো কাজটি খতিয়ে  দেখা হয়। এই বিষয়ে সেই সময়ে কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি সাংবাদিক কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই অনিয়মের ব্যাপারে আমাদের হেড অফিস অবগত আছে। আমাদের হাতে কিছু ছিল না। তার ক্ষমতা অনেক। আমরা কিছু করার বা বলার সুযোগ ছিল না।

বিএডিসি অফিস থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ অফিস ভবনের নির্মাণ কাজের অনিয়ম নিয়ে বিএডিসি অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত হয়। তদন্তে ভবন নির্মাণে  ৩৬টি খাতে অনিয়ম ধরা পড়ে। তদন্ত বলা হয়েছে, পুরো ভবনের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ফাটল ও প্লাস্টার খসে পড়ছে। বাইরে লাগানো সিরামিক খসে পড়ছে। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিম্নমানের রং লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া নিম্নমানের ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে ভবনে। অনেক কাজ সমাপ্ত না করেই খাতা-কলমে সমাপ্ত  দেখানো হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।  তদন্তে  দোষী হলেও আওয়ামী লীগের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাকের ম্যধ্যমে দফারফা করে নুরুল ইসলাম রক্ষা পান।

এরপর নুরুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা দিয়ে চট্টগ্রামে বদলি  নেন। চট্টগ্রামে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসিরের  ছত্রছায়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নুরুল ইসলাম। প্রতিটি কাজে প্রায় ১০ শতাংশ  হারে কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের কাজ দিতেন। যা বিভিন্ন ঠিকাদারগন স্বীকার করেছেন। পাইপ ক্রয়ের  টেন্ডারের জন্য নিতেন ১৫শতাংশ কমিশন। পাইপ ক্রয়ে টেন্ডারে উল্লেখিত অভিজ্ঞতার শর্ত পুরন না করলেও সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিছেন। এর মধ্যে চট্রগ্রামে এন. এম প্ল্যাষ্টিক  কোম্পানিটি এস আলম গ্রুপের মালিকের এক আত্বীয়। এন. এম প্ল্যাষ্টিক কোম্পানির সিইও আসাদুজ্জামান মাসুদকে দিয়ে  নুরুল ইসলাম তার সকল অবৈধ্য কার্যকলাপ, লুটপাট ও  ঠিকাদারকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে নিজের সুবিধা বুঝে নিতেন। তিনি এন. এম প্ল্যাষ্টিক কোম্পানিকে এক তরফাভাবে অনেক কাজ দিয়েছেন। এই বিষয়ে খোঁজ নিলে তার সত্যতা পায় প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি টিম।

আরো খোঁজ নিয়ে জানা, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা এখন সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দল পাল্টে বিএনপির সাথে আতাত তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যাবহার করছেন। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না এবং কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেন না। 

ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরবর্তী অংশে অবৈধ ভাবে অর্জিত  বিভিন্ন সম্পদ, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ত্বশীল কর্মকতাদের স্বচিত্র মতামত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের দূর্নীতির আরো চিত্র তুলে ধরা হবে।
কমেন্ট বক্স