ঢাকা ০৪:২৩:০০ এএম | ২২ মে ২০২৫ ইং | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনইউবিতে তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ: ইউজিসি সদস্য আনোয়ার হোসেনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশের তারিখ: মে ৪, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
ডেস্ক নিউজ:  নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইউবি)-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাত, পক্ষপাতিত্ব এবং অনৈতিক তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করছে,  ড. আনোয়ার পরিকল্পিতভাবে এনইউবিতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও সুনামকে হুমকির মুখে ফেলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০১১ সালে এনইউবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এবং আর্থিক সংকটে পড়লে তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য আইন অনুযায়ী পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন। পরবর্তীতে গঠিত নতুন ট্রাস্টি বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রশাসনে পরিবর্তনের পর, হঠাৎ করেই লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন নিজেদের এনইউবির ট্রাস্টি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন ফোরামে তারা এনইউবি পরিচালনায় পুনঃঅধিকার দাবি করেন এবং অভিযোগ রয়েছে, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানান। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো এবং নিজেদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মনোনীত করার অপচেষ্টায় জড়িয়ে পড়েন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেন।

লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিনের প্ররোচনায় আনোয়ার হোসেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু নোমান মো. ফারুক আহমেদকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করেন। পরে জানা যায়, নোমান ফারুক সরাসরি অভিযোগদাতাদের ঘনিষ্ঠজন। শুধু তাই নয়, তিনি নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের গভর্নিং বডির সদস্য পদেও সুপারিশপ্রাপ্ত হন, যেখানে পূর্ববর্তী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষরহীনভাবে তাকে প্রস্তাব করা হয়।

এই জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে এনইউবির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড ইউজিসি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করে। প্রমাণ পাওয়ার পরপরই ইউজিসি নোমান ফারুককে তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ড. আনোয়ার হোসেন পুনরায় সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আলতাফ হোসেনকে নতুন আহবায়ক হিসেবে প্রস্তাব করেন। তিনিও লুৎফর ও বোরহানের পূর্বপরিচিত ও একই এলাকার বাসিন্দা, এবং অতীতে এনইউবিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন।  আরো জানা যায়, আলতাফ হোসেন বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব হিসেবে এবং অগ্রণী ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সুবিধাভোগী হিসেবে চুক্তিভিত্তিতে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি তারা আবার ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, তবে আনোয়ার হোসেনের আত্মীয়দের এনইউবির ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই উদ্দেশ্যে আনোয়ার হোসেন তাদের মনোনীত লোকদের বারবার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পদে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, তিনি অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

এনইউবির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, “স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নামে প্রহসন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা চাই, ইউজিসি প্রকৃত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করুক, যেখানে কোনো পক্ষের ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করবে না।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন ইউজিসি সদস্যের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ গভীর উদ্বেগজনক। তদন্ত কমিটি গঠনে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও পক্ষপাতিত্ব জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আস্থা নষ্ট করছে।

অভিযোগের বিষয়ে ড. আনোয়ার হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউজিসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার একজন সদস্য যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ ও অনৈতিক সুবিধা লাভে জড়িত হন, তবে তার আর দায়িত্বে থাকার ন্যূনতম নৈতিক অধিকার নেই। দ্রুততার সঙ্গে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে ইউজিসি সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা।

একইসাথে আওয়ামী দোসর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আলতাফ হোসেনকে আহবায়ক হিসেবে করা  প্রহসনের এই কমিটি বাতিল করে ইউজিসিকে অবিলম্বে প্রকৃত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আহ্বান জানান তারা।

কমেন্ট বক্স