বাংলার প্রতিচ্ছবি : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বুধবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার ব্যানারে তারা এ অনশন শুরু করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া চত্বরে আটজন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় রয়েছেন। অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন- তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, জিয়াউদ্দিন আয়ান, নাজমুল হাসান লিমন, জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম, মেহরাব হোসেন তূর্য, নাহিদ হাসান ইমন, সাজ্জাদ হোসেন।
গত ২১ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকাল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনরত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশনে বসেছি। অনশনরত শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে কিন্তু এখনো ইন্টেরিমের ঘুম ভাঙছে না। লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় আসা ইন্টেরিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গাদ্দারি করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জোরালোভাবে বলতে চাই কুয়েটের দলকানা ভিসি মাছুদকে না সরালে আমরা সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি দিব এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
নৃবিজ্ঞান ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন বলেন, কুয়েটের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা সময় ধরে অনশনে আছেন। এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে আমাদের মেধাবী প্রজন্ম। কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে এই দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারকেই নিতে হবে। ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই সরকার চোখ থাকতেও অন্ধের ন্যায় ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। আমরা মনে করি কুয়েটের ভিসি খুনি হাসিনার মতো তার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। কুয়েট ভিসি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে গদি থেকে নামানো হবে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, আমরা দেখছি যে উপদেষ্টা পরিষদে আমাদের ছাত্র উপদেষ্টা যারা রয়েছেন ছাত্রদের ইস্যুতে তাদের যখন চুপ থাকতে দেখি তখন আসলে আমাদের মনে হয় যে, তারা তাদের লেজিটেমিসি হারিয়েছেন। যদি কুয়েট ইস্যুতে কোনো ছাত্রের সাথে খারাপ কিছু ঘটে তাহলে সেদিনই হবে এই ইন্টেরিম সরকারের শেষ দিন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংগঠক জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম বলেন, উনার পদত্যাগ করতে হবে, আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিগত সময় দেখেছি স্বৈরাচার যেভাবে মসনদ আঁকড়ে ধরেছিল উনিও সেভাবে আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। আমরা চাই না দেশে নতুন কোনো স্বৈরাচার আসুক। কুয়েটের ভিসি কোন ক্ষমতাবলে তার গদি এখনো ধরে আছেন সেটা আমাদের জানতে হবে। কুয়েটের অনশনরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাণ সংশয় কখনো কাম্য নয়, সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে বসেছি। যদি তারা কোনো সিদ্ধান্ত না জানায় তাহলে আমরা মহাসড়ক অবরোধে যাব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের উপর যে ইন্টেরিম সরকার বসে আছে, সেই সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে কর্ণপাত করছে না। কুয়েটের শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনশনে বসেছে, আমরাও তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছি।