বাংলার প্রতিচ্ছবি : শিগগিরই চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের নতুন দ্বার খুলবে। সেইসঙ্গে খুলবে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দরের কার্গো সার্ভিসকে চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতায় প্রস্তুত করছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দুই বছর পর এই বিমানবন্দরে পুনরায় কার্গো সার্ভিস চালুর উদ্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। ইতিমধ্যে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ আগ্রহের বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এটিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের একটি নতুন দ্বার হিসেবে দেখছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, ‘গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত। এরপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে শাহ আমানত বিমানবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্গো পরিবহনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে বেবিচক চেয়ারম্যানের দিকনির্দেশনায় গত সোমবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জরুরি সভা হয়। এতে কার্গো অপারেশন সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।’
তিনি বলেন, ‘সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা, বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যাকার সমন্বয় ঘাটতি নিরসন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ ও অন্যান্য দেশে কার্গোর মাধ্যমে আমদানি-রফতানির শর্তগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ অন্যান্য অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কার্গো টার্মিনালের নানা প্রতিবন্ধকতা নিরসনসহ কার্গো পরিবহনের বিভিন্ন শর্ত পূরণে সভায় উপস্থিত সবার সর্বসম্মতিতে তিন ধাপে যেমন; স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সভায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেছেন, ‘ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক। এখন আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবো। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আমাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপসহ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কার্গো পরিবহন চালুর সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো।’
এটি দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে উল্লেখ করেছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তা আবু বক্কর। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে এমিরেটস এয়ারলাইনস চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে চার দিন কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করতো। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা ইতিহাদ এয়ারওয়েজ সপ্তাহে একদিন কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করতো। নানামুখী ষড়যন্ত্রে এসব কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু করা যায়নি।’
চট্টগ্রামে পাঁচটি ইপিজেডসহ একাধিক উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা রয়েছে উল্লেখ করে আবু বক্কর বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আমদানি-রফতানি পণ্যের সংকট হবে না। নতুন করে কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়টি আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। বিমানবন্দর এলাকায় প্রচুর জমি খালি পড়ে আছে। এসব জমি ব্যবহারের পাশাপাশি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করলে চট্টগ্রাম থেকে কার্গো সার্ভিস বাড়বে।’
চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে চীনের সঙ্গে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যাগ অত্যন্ত ভালো খবর। এই উদ্যাগের ফলে চীনের সঙ্গে আমদানি-রফতানির প্রসার ঘটবে। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় এর ধাক্কা সামলাতে আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন তথা বাণিজ্যিক কার্গো ফ্লাইট চালু অতি জরুরি। এ ছাড়া আমাদের বেশিরভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে সমুদ্রেপথে। কার্গো সার্ভিস শুধু চীনের সঙ্গে নয়, নেপাল, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্ত করা গেলে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।’
এর আগে গত ২০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের একটি নতুন দ্বার খুলবে। বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম-কুনমিংয়ে সরাসরি ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে। এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা।’