ঢাকা | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

যা যা বলা হয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৮ দফা সুপারিশে

প্রকাশের তারিখ: মার্চ ৪, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : বিচার বিভাগের সংস্কারের জন্য ২৮ দফা সুপারিশ করেছে এ উদ্দেশ্যে গঠিত সংস্কার কমিশন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

কমিশনের ২৮ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- 
১. সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা; ১.১. সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের প্রাধান্য এবং আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীনতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান প্রণয়ন; ১.২. যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ (নয়) সদস্য বিশিষ্ট "সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন" গঠনের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন; ১.৩. প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত কমিশন কর্তৃক উন্মুক্ত আবেদনের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই এবং সুপারিশ। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ; ১.৪. সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সাবেক বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নন এমন পদে আসীন ব্যক্তিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ; ১.৫. রাষ্ট্রপতির নিকট হতে প্রাপ্ত অনুরোধ ছাড়াও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার ক্ষমতা কাউন্সিলকে প্রদান।


২. অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (পে-কমিশন) বিধিমালা, ২০০৭ এর ৪ বিধির অধীনে পে-কমিশন গঠন এবং বিচারকদের বেতন-ভাতাদি সংক্রান্তে নতুন সুপারিশ প্রণয়ন, বিচারকদের জন্য আচরণবিধি ও বদলি নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনক্রমে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনয়ন। সে উদ্দেশ্যে বিচার-কর্মবিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন। সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয়ের আওতায় বিচার-কর্মবিভাগের বিচারক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করা।

৪. আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ ৪.১. সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা। তবে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বা অবিভাজ্যতা এমনভাবে বজায় রাখতে হবে, যেন স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশের সর্বত্র কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনও ভৌগলিক সীমারেখা দ্বারা বিভাজিত না হয়, এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ণ না হয়; ৪.২. উপজেলা সদরের ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা-সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত স্থাপন।

৫. স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস- ৫.১. সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন এবং ওই সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতন কাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধান প্রণয়নের প্রস্তাব; ৫.২. অ্যাটর্নি সার্ভিসকে একটি স্থায়ী পেনশনযোগ্য সরকারি চাকরি হিসাবে প্রতিষ্ঠা। সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতন কাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধান সম্বলিত আইন প্রণয়ন। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বাজেট বরাদ্দ ও সহায়ক জনবলের ব্যবস্থা রাখা; ৫.৩. প্রস্তাবিত সার্ভিসের দুটি শাখা থাকবে: (ক) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি সার্ভিস এবং (খ) সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি এবং জেলা অ্যাটর্নি সমন্বয়ে গঠিত জেলা অ্যাটর্নি সার্ভিস। ৫.৪. ক্রান্তিকালীন বিধান রাখা যেন প্রস্তাবিত রূপরেখা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বেও অ্যাটর্নি সার্ভিস কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

৬. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন আদালত কর্তৃক চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বোর্ড প্রতিষ্ঠা, যার সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

৭. স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস- ৭.১. সরকার কর্তৃক আইন দ্বারা বর্তমানে বিভিন্ন তদন্ত ইউনিটে নিয়োজিত জনবলের সমন্বয়ে একটি পৃথক তদন্ত সার্ভিস গঠন। সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, ওই সার্ভিসে নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ এবং ওই সার্ভিসকে কার্যকর করার জন্য যাবতীয় বিধান, যতদূর সম্ভব, মূল আইনেই অন্তর্ভুক্তকরণ। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এবং অন্যান্য যেসব আইনে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের উল্লেখ আছে সেসব আইনে সংশোধনী আনয়ন এবং ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধানমালা সংস্কার; ৭.২. এই সার্ভিস হবে পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের নিয়োগ, চাকরির শর্তাবলি, নিয়ন্ত্রণ, বাজেট, অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোভুক্ত হবে। দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা ব্যবহারে সার্ভিস স্বাধীন থাকবে; ৭.৩. এই সার্ভিস গঠনের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে প্রেষণে নিয়োগ ও আত্মীকরণ; ৭.৪. তদন্ত সার্ভিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারা পরিচালিত হলেও এর কর্মকর্তারা যাতে রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার না হন, তার জন্য একটি উচ্চতর কমিশনের পূর্বানুমোদন ছাড়া তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

৮. বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান-সংশোধনী ৮.১. প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলো সংশোধন, যার মধ্যে রয়েছে: অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) (রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা), ৫৫(২) (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগের বিষয়কে পৃথক করা), ৯৪ (বিচারকদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির মতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ (সাত) জন করা), ৯৫ (রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনও স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনও প্রভাব থাকবে না।

৯. অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামো: মামলা ও জনসংখ্যার আলোকে অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ। একই ধরনের আদালতের জনবল কাঠামো এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জমাদির ধরনে অভিন্নতা আনয়ন এবং বিচারকদের পদ সৃজনে পদ্ধতিগত জটিলতা দূরীকরণ। পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা। একই গ্রেডভুক্ত সহায়ক কর্মচারীদের জন্য একই ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে একই পদ্ধতিতে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক নিয়োগ।

১০. বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা 
১০.১ বিচার বিভাগের বাজেট নির্ধারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটি থাকবে এবং সেই কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসাবে থাকবে। বরাদ্দকৃত বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করা এবং তা উপযোজন এবং পুনঃউপযোজনের পরিপূর্ণ ক্ষমতা প্রদানসহ সুপ্রিম কোর্টের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দকরণ। বিচার বিভাগের বাজেট বৃদ্ধি।

১১. বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার 
১১.১ প্রথম পর্যায়ে বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন। ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন। দেওয়ানি আদালতে ই-ফাইলিং এর কার্যক্রম শুরু করা। ই-ফাইলিং এর মামলাগুলোকে কোর্ট-ফি হ্রাস/ছাড় ও ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে ই-ফাইলিংকে উৎসাহিত করণ। সকল আদালতে বর্তমান ব্যবস্থার পাশাপাশি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ই-ফাইলিংসহ সকল কোর্ট-ফি, খরচ, জরিমানা ও অন্যান্য ফি পরিশোধের ব্যবস্থা চালু করণ। শতভাগ মামলার তথ্য ই-কজলিস্ট মডিউলের মাধ্যমে প্রদর্শন। সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামির হাজিরাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্পাদন।

১২. অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামো
১২.১. ভবন নির্মিত হয়নি এমন ৩৭টি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ভবন নির্মাণের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প গ্রহণ, এবং প্রকল্পের সুপারিশের ভিত্তিতে যেসব ক্ষেত্রে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা।

১৩. আদালত ব্যবস্থাপনায় সুপ্রিম কোর্ট 
১৩.১. আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বিশেষত আপিল বিভাগে সকল সময় ন্যূনতম ৩টি বেঞ্চ পরিচালনা নিশ্চিত করা; 
১৩.২. যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মামলার নোটিশ জারি ও শুনানির জন্য প্রস্তুতকরণ নিশ্চিত করার জন্য ডাক বিভাগের সাথে যৌথ আয়োজনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নোটিশ ফেরৎ আসা নিশ্চিত করা; 
১৩.৩. অনলাইনে মেনশন-স্লিপ জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যাতে এ কারণে আইনজীবীদের ও আদালতের সময় নষ্ট না হয় এবং আদালতের কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পায়। হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিবন্ধনে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ; ১৩.৪. বেঞ্চ পুনর্গঠন বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন, যাতে করে বেঞ্চ পুনর্গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট বিচারক বা বিচারকদের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের আগেই অবহিত করা যায়; 
১৩.৫. আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের এখতিয়ারে পরিবর্তন আনা, যাতে সুনির্দিষ্ট ও অতি জরুরি বিষয় ছাড়া স্থগিতাদেশের আবেদন নিয়মিত বেঞ্চ থেকে নিষ্পত্তি হয়; 
১৩.৬. সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব পোর্টালের ব্যবহার সম্প্রসারণ করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের প্রত্যেকটি আদেশ ও রায়ের ইলেকট্রনিক কপি অনলাইনে প্রাপ্তিযোগ্য করা।

১৪. বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব বিচারকদের ছুটি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, আদালতে প্রকাশ্যে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা, আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিচারপ্রার্থীরা যে হয়রানির শিকার হন, তার প্রতিকার বিধান।

১৫. বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধ 
১৫.১. সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন সকল পর্যায়ের বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দুর্নীতি বিরোধী সুস্পষ্ট বিধানসম্বলিত আচরণবিধিমালা প্রণয়ন। প্রতি তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ এবং তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা; 
১৫.২. প্রতি তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এবং অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; 
১৫.৩. সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিলের জন্য ডেডিকেটেড ইমেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে প্রদান করা; 
১৫.৪. অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা। তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রতি ৩ মাস পর পর সিদ্ধান্ত প্রদান। তদন্ত কমিটিতে অভিযোগ জানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং একটি ডেডিকেটেড ইমেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে প্রদান করা। অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিরীক্ষার জন্য জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত সকল অভিযোগ পর্যালোচনা করা এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা; 
১৫.৫. অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রতিটি জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা এবং ই-মেইলের মাধ্যমে দুর্নীতির শিকার ব্যক্তি যেন তার অভিযোগ জানাতে পারে, সে জন্য জনসাধারণকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি ডেডিকেটেড ইমেইল অ্যাড্রেস (যা প্রতিটি জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য আলাদা হবে) প্রদান করা; 
১৫.৬. আইনজীবীদের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় পৃথক পৃথক অভিযোগ গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা; 
১৫.৭. বিচারাঙ্গণে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা চালু করা।

এছাড়াও 
১৬. আইনগত সহায়তা কার্যক্রম; 
১৭. বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি; 
১৮. মামলাজট হ্রাস; 
১৯. গ্রাম আদালত; 
২০. মোবাইল কোর্ট; 
২১. আইনের সংস্কার; 
২২. বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণ; 
২৩. আইন পেশার সংস্কার; 
২৪. আইন শিক্ষার সংস্কার; 
২৫. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ; 
২৬. বিচারহীনতার সংস্কৃতি; 
২৭. বিচারাঙ্গনেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তকরণ 
২৮. সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন বিষয়ে সুপারিশ করেছে গঠিত কমিশন। 

এরআগে, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন—হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সদস্য এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বিচারপতি এমদাদুল হক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদী মাজদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন) এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

গঠনের পর ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কমিশন মোট ২৯টি সভা করেছে।
কমেন্ট বক্স