বাংলার প্রতিচ্ছবি । ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ !! ১১:২১
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির সম্প্রচারে চলে আসায় তা সাত দিনের জন্য বন্ধের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আবেদনটি অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়েরের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। অন্যদিকে সময় মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।
পরে আইনজীবীরা জানান, সময় টিভি এরইমধ্যে সম্প্রচারে চলে এসেছে। এ কারণে আবেদনের কোনও কার্যকারিতা নেই। তাই আদালত আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১০ আগস্ট গুলশানের সিটি হাউজে সময় মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, সভায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই সভায় পরিচালক শম্পা রহমানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সময় মিডিয়া লিমিটেডের সব কার্যক্রম এখন থেকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে।
পরে এ অব্যাহতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে আরেকটি আবেদন করেন আহমেদ জোবায়ের। এই আবেদনের শুনানিতে আদালতে সিটি গ্রুপের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করীম। আহমেদ জোবায়েরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা সময় টিভিসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য সময় টিভি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবারও সম্প্রচারে আসে চ্যানেলটি। এরপরই সামনে আসে মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব।
তবে একটি রিট চলমান অবস্থায় আরেকটি রিট দায়ের করেন শম্পা রহমান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৯ আগস্ট সময় টিভির সম্প্রচার সাত দিনের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের পর আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, সময় টেলিভিশনের ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ছিল শম্পা রহমানের। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশি করার জন্য সাবেক মন্ত্রী ও তার ভাগ্নের নামে বেশি শেয়ার দেখানো হয়েছিল। একই সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশকে গুলি চালাতে বলেছিলেন সময় টিভির এক ক্যামেরা পারসন। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোবায়ের রহমানের পদত্যাগসহ টিভি কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকরা। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত রিটের আদেশে হাইকোর্ট সময় টিভির সম্প্রচার সাত দিনের জন্য বন্ধ রাখার আদেশ দেন।
কিন্তু একটি রিট চলমান থাকাবস্থায় আরেকটি রিট দায়ের করার অভিযোগে গত ১৯ আগস্টের হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানান আহমেদ জোবায়ের। এর ধারাবাহিকতায় আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে ওঠে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা সময় টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষে ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল বাণিজ্যিক সম্প্রচারে আসে।
লাইসেন্স নেওয়ার সময় তৎকালীন মন্ত্রী কামরুল ইসলামের ভাগ্নে আহমেদ জোবায়েরের নামে ৯৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। ব্যবসায়িক ও পারিবারিক সূত্রের তথ্যমতে, ৯০ শতাংশ শেয়ার কামরুল ইসলামের হলেও কাগজে-কলমে তা ছিল আহমেদ জোবায়েরের নামে।
অন্য অংশীদারদের মধ্যে কামরুল ইসলামের ভাই মোরশেদুল ইসলামের ৩ শতাংশ এবং নিয়াজ মোরশেদ ও তুষার আবদুল্লাহর ২ শতাংশ করে শেয়ার ছিল।
এরপর দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিটি গ্রুপ সময় টেলিভিশনে ৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তাদের কাছে ৭৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ জোবায়েরের মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী কামরুলের পরিবারের কাছে থেকে যায়। পরে তুষার আবদুল্লাহ সময় টিভি ছেড়ে যান।