বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১৬ আগষ্ট ২০২৪ !! ২২:৪৫
কলকাতায় নারী চিকিৎসক মৌমিতা দেবনাথকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এর প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা ভারতীয়দের প্রতি সংহতি জানিয়ে গণসংহতি ও মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ধর্ষণ বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর র্যাপিস্ট’, ‘জাস্টিস ফর মৌমিতা, জাস্টিস ফর মৌমিতা’ বলে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী সজীবের সঞ্চালনায় আরেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘প্রতিটা ধর্ষণই রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রাষ্ট্র ধর্ষককে তৈরি করে ও পৃষ্ঠপোষক করে। আমাদের আপুরা রাজপথে, লড়াইয়ে, সংগ্রামে সব থেকে বেশি নিরাপদ। সবাইকে বলবো, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেখানেই অন্যায়, সেখানেই আমাদের সঙ্গে থাকবেন। ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় চার হাজারের মতো ধর্ষণ হয়েছে, যেখানে বিচার হয়েছে মাত্র পাঁচটির। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার সেই ধর্ষণের বিচার করবে। ভারতে এইবারই প্রথম ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, এর আগেও ঘটেছে। আমরা এর সঠিক সমাধান চাই। আমরা চাই, আমাদের আপুরা স্বাধীনভাবে নিরাপদে বসবাস করুক।’
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘সন্তানেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে আমাদের যখন রক্তের দাগ মেশেনি তখন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আমরা ভারতের জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানাতে এসেছি। আমি দাবি জানাচ্ছি, ভারতসহ বাংলাদেশে যে ধরণের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যেমন বাংলাদেশে
তনু হত্যা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা- এর বিচারও দাবি করছি। বিগত সময়ে যে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আমরা তার বিচার চাই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ঢালি বলেন, ‘একজন ডাক্তার সবসময় তার কর্মস্থলকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করেন। আর সেই দ্বিতীয় বাড়িতে মৌমিতা নির্মমভাবে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকার হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তার কারণ, তারা খুনিদের ধরতে চায় না। আমরা বাংলাদেশ থেকে বলতে চাই, এ ধরণের অন্যায় আমরা মেনে নেবো না।’
সমাপনী বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর যে প্রান্তেই অন্যায়, অবিচার, ফ্যাসিজম, স্বৈরাচার থাকবে, সে দেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সবসময় আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হবে। এই অভ্যাস যতদিন পর্যন্ত আমরা না করতে পারবো, ততদিন পৃথিবী থেকে অন্যায়
অবিচার যাবে না।’ এ সময় তিনি মৌমিতাকে ধর্ষণ ও খুনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা ভারতীয়দের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মোমবাতি প্রজ্বালন ছাড়াও ধর্ষণবিরোধী কবিতা, গান এবং পারফর্মিং আর্টের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) ভারতের কলকাতা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে মৌমিতা দেবনাথকে (৩০) ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মৌমিতা। শুক্রবার দুপুরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেমিনার হল থেকে মৌমিতা দেবনাথের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।