Saturday, September 21, 2024
Google search engine
Homeজাতীয়জিয়াউল আহসান স্বীকার করেছেন গুম-খুনে সম্পৃক্ততার কথা, আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা

জিয়াউল আহসান স্বীকার করেছেন গুম-খুনে সম্পৃক্ততার কথা, আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরের হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও নিধন, মোবাইল ফোনে আড়িপাতা আড়ি পাতা প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’ এবং আয়নাঘরের ধারণাসহ অসংখ্য মানুষকে গুম-খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. সজিব মিয়া এসব কথা উল্লেখ করেন।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় জিয়াউল আহসানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. সজিব মিয়া তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও নিধন, ইসরায়েলি সংস্থা এনএসওর তৈরি ফোনে আড়ি পাতার প্রযুক্তি পেগাসাস এবং আয়নাঘর কনসেপ্টসহ অসংখ্য গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। মামলার রহস্য উদঘাটন, জড়িত অন্য আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে গ্রেফতার, হত্যার ঘটনায় ব্যব্হৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাকে নিয়ে অভিযান চালানোর জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

যদিও রিমান্ড শুনানিকালে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘আমি কোনও গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত না। আমি নির্দোষ ন্যায় বিচার চাই।’

রিমান্ড শুনানি চলাকালীন সময়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি আয়নাঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন, তাদের কেউ বলুক আমি তাদের সেখানে রেখেছি। যেভাবে আমাকে নিয়ে দোষারোপ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।

আর পেগাসাস প্রযুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্যাগাসাস বলে কিছু নেই। আমি মোবাইল ট্র্যাক করিনি। আমি নির্দোষ।’

রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান বলেন, আসামি এই হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা, তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। শুধু এটাই নয়, আরও অনেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

জিয়াউল আহসানের পক্ষে তার ছোট বোন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, এতক্ষণ প্রতিপক্ষের আইনজীবী যা বললেন, তা পল্টন ময়দানে সুন্দর হয়। আয়নাঘর কী জানি? সারা বিশ্বে আয়নাঘর থাকে। আয়নাঘর ডিজিএফআই-এর, তিনি ডিজিএফআইয়ে ছিলেন না। এসব কু-কথা মিডিয়া, ফেসবুকের সৃষ্টি। জেলাসের কারণে এ অবস্থা, মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। একথা বলা অন্যায়, অযৌক্তিক। মামলার জন্য না। মামলার সঙ্গে যোগসূত্র নেই।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউল আহসান উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাকে খিলক্ষেতে পাওয়ার তথ্য ভুল। আর্মি চিফের ডাকে তাকে নিয়ে যাওয়া যাওয়া হয়। ৯ দিন আয়নাঘরে থেকে এসেছেন। তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

এদিকে রিমান্ড শুনানির পক্ষে মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল নামে এক নিরপেক্ষ আইনজীবী বলেন, এ আসামি মানুষরূপী অমানুষ। তাকে ঘৃনা করার ভাষা নেই। আয়নাঘরের অন্যতম কারিগর। মানুষকে ধরে নিয়ে গুমের কালচার সৃষ্টি করেছে। দেশকে আফগানিস্তান বানিয়েছে। হাজার হাজার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

শুনানি তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে শত শত মামলা হবে। তিনি একজন গণহত্যাকারী। ইলিয়াস আলীসহ কয়েকজন গুমের জন্য তিনি দায়ী। আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর জন্য জিয়াউল আহসানসহ এরকম কয়েকজন আছেন। তারা অন্যতম কারিগর।

এর বিরোধিতা করে নাজনীন নাহার বলেন, একজনের বিরুদ্ধে যতক্ষণ না পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, এটা বলা অন্যায়।

আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ উল্লাহ খান বলেন, তিনি একজন কণ্ঠরোধকারী। তাকে ঘৃনা জানানোর ভাষা নাই।

পরে উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) গভীর রাতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।

গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম মামলাটি করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments