Saturday, September 28, 2024
Google search engine
Homeজাতীয়২০২৪-২৫ বাজেটে প্রাধান্য পেলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

২০২৪-২৫ বাজেটে প্রাধান্য পেলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

২০২৪-২৫ এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোয়। সঙ্গে থাকছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ। এজন্য বাজেটের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট রেখে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করার পদক্ষেপ থাকছে আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের প্রথম বাজেটে। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্রত নিয়ে অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট উপস্থাপন করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মন্ত্রী যখন জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করছেন ঠিক তখন মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ঘরে। মূল্যস্ফীতি ছাড়াও বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে দেশি–বিদেশি ঋণের সুদহারের বাড়তি চিন্তা তার মাথায়। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি ও ঋণের সুদহারের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন সাবলীলভাবে। শুধু তাই নয়, দেশে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি যে এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি সেটি অকপটেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসার সাম্প্রতিক প্রবণতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনও ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।

একইসঙ্গে সংসদকে অর্থমন্ত্রী জানান, পশ্চিমা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০২২ সাল থেকে সুদহার ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে। এতে আমাদের দেশের সুদহারও বাড়াতে হয়েছে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মান উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছ। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এখন দুই ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় মূলধন ফেরত নেওয়া বেড়েছে। আবার ডলার আসছে কম। এতে একদিকে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে। আরেকদিকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দায় বাড়ছে।  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আমদানি শুল্ক ও উৎসে কর কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। প্রায় ৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু পণ্যের ওপর সরকার কিছু করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব ভালো, তবে দেখার বিষয় হলো এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হয়। কারণ, দেখা যায় কর কমালেও সেটার বাজারে প্রভাব পড়ে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী করা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশের নেওয়া পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এসব নীতি-কৌশলের ফলেই আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে আগামীতে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। এতে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে। স্থিতিশীলতা আসবে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারেও। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির আওতায় যুগপৎভাবে নেওয়া কার্যক্রমকে সফল করতে সহায়ক হবে।

বাজেট বক্তৃতার শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের কথা স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচিন ইশতিহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

বক্তৃতার উপসংহারে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কৃচ্ছসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে চালু রাখা হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ হতে নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা প্রদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। তিনি জানান, যেসব বিষয়ে প্রাধিকার দিয়ে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে তার একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম যৌক্তিকভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। এ লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আরও ৯ লাখ ৮১ হাজার ৬১ জনকে যুক্ত করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ৫ লাখ প্রতিবন্ধী, এক লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জন মাতৃত্বকালীন, ২ লাখ বয়স্ক ব্যক্তি, ২ লাখ বিধবা, ৫ হাজার ৭৪৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের এবং ৯০ হাজার ৮৩২ জন সমাজের অনগ্রসর অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ ভাতার আওতায় আনা হবে।

সরকারের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ থেকে ৬৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। সেই সঙ্গে সিগারেট ও বিড়ির পেপারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সব ধরনের সিগারেট-বিড়ির দাম বাড়বে। সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ১ শতাংশ এবং পেপারের ভ্যাট ৮ শতাংশ বাড়লে প্রতিটি শলাকার দাম বাড়বে। এতে খরচ বাড়বে ধূমপায়ীদের।

ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর ফলে ধনীদের ব্যাংকে জমানো টাকায় খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে তিনি এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব করেছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। আর ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও বিনিয়োগকারী ৬০ লাখ টাকা ক্যাপিটাল গেইন করলে, সেই ক্যাপিটাল গেইনের ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি ১০ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। নতুন বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর আরও ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বাজেটে আগের মতোই বাজেটের প্রায় ৪ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে অনুৎপাদনশীল খাতে, বেতন, প্রণোদনা, ভাতা ও ভর্তুকি পরিশোধ বাবদ। এছাড়া বিল, বন্ড ও সঞ্চয় সরঞ্জামের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।

সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও কৃষি খাত। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতার পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতের জন্য। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি। এ খাতের জন্য বরাদ্দ ১৪ শতাংশ। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়ার তালিকায় রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাত। পরিবহন ও যোগাযোগে বাজেটের ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।

এছাড়া জনপ্রশাসনে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যণে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৪ শতাংশ, গৃহায়ণে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ, বিনোদন সংস্কৃতি ও ধর্মে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিসে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ, পেনশনে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, বিবিধ ব্যয় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৬ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ, কৃষিতে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং প্রতিরক্ষয় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসছে

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন তাতে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) মওকুফ আছে, যার সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত। অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কিছু না বলার মানে আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসছে। সংসদ চলাকালে ৩০ জুনের মধ্যে যদি মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে বাড়বে মেট্রোরেলের ভাড়া।

এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল

সাধারণত, গাড়ি আমদানিতে কোনও শুল্ককর দিতে হয় না সংসদ সদস্যদের। পাঁচ বছরের জন্য একটি গাড়ি আমদানিতে এ সুবিধা পান এমপিরা। এবার এ সুবিধা আর থাকছে না। এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে মোট করভার হবে ৪৩ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। চার বছর পর এবার আবারও ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাক না কেন কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহারে এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনও কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।

সাধারণ মানুষের বিশেষ করে চাকরিজীবীদের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের মতো এবারও ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার বার্ষিক আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। তবে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সর্বোচ্চ আয়ের কর সীমা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

করমুক্ত আয়সীমার বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যমান স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি। একইসঙ্গে বিদ্যমান সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

২৭টি পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ২৭ পণ্য।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২৫০ সিসির কম মোটরসাইকেলের দাম কমছে। কেননা মোটরসাইকেলের আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর অতিরিক্ত ৩ শতাংশ শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশে আনুমানিক প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনও না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছেন। যদিও তাদের মধ্যে সব রোগীর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয় না, তবে যারা ডায়ালাইসিস নেন প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে তাদের জন্য সুখবর দেওয়া হয়েছে। ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত দুটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ কমতে যাচ্ছে।

কোনও ব্যক্তির নামে একাধিক গাড়ি বা মোটরগাড়ি থাকলে অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হবে। এটিকে বলা হচ্ছে পরিবেশ সারচার্জ। একের অধিক প্রতিটি গাড়ির জন্য নানা হারে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে। গাড়ির নিবন্ধন বা ফিটনেস নবায়নকালে এই সারচার্জ নেওয়ার বিষয়টি প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

শুল্ককর পরিশোধ করে এতদিন বিদেশ থেকে কোনও যাত্রী দুটি মোবাইল আনতে পারতেন। তবে নতুন ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী নতুন মোবাইল আনতে হলে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা দামের মোবাইলের জন্য ৫ হাজার টাকা, ৩০-৬০ হাজার টাকা দামের মোবাইলের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার বেশি দামের মোবাইলের জন্য ২৫ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আসন্ন বাজেটে ব্যাগেজ রুলে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেমন ২৪ ক্যারেট স্বর্ণালঙ্কার আনা যাবে না। ২২ ক্যারেট বা তার নিচের ক্যারেটের স্বর্ণালঙ্কার ১০০ গ্রাম আনা যাবে। ১২ বছরের কম বয়সীরা ব্যাগেজ সুবিধায় স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণবার, মদ-সিগারেট আনতে পারবে না। অন্যদিকে যাত্রীর সঙ্গে আনা হয়নি এমন ব্যাগেজ (ইউ-ব্যাগেজ) শুল্কছাড় সুবিধা পাবে না। এ ধরনের ব্যাগেজে আনা পণ্যভেদে শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট, তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত, তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং এই খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর হচ্ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

এর আগে মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো গ্রাহকদের। এখন তা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জও দিতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর হ্রাস-বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। যেসব পণ্যের শুল্ক ও কর বাড়বে সেগুলোর বাজারমূল্যও বেড়ে যাবে।

নতুন মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ফলে নতুন অর্থবছরে মোবাইলের সিম ব্যবহারের জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর কর আরোপ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে করে কোক, স্প্রাইট ও পেপসিসহ কোমল পানীয়র দাম বাড়বে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments