Sunday, September 22, 2024
Google search engine
Homeদেশসচিবের বাবার নামের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে জনগণের টাকায়

সচিবের বাবার নামের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে জনগণের টাকায়

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েই একই মন্ত্রণালয়ের টাকায় বাবার নামে হাসপাতাল করার প্রকল্প নিয়েছেন মো. খায়রুল আলম সেখ। প্রকল্পটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা সমজাতীয় স্থাপনা নির্মাণ-পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওকে অনুদান দেয়। নিয়ম হলো, শহর এলাকায় প্রকল্প করতে মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ও গ্রাম এলাকায় ৮০ শতাংশ অর্থ সরকার দেবে, বাকিটা দেবে এনজিও।

মো. খায়রুল আলম সেখকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সমাজকল্যাণসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই মাসের মধ্যেই (৬ ডিসেম্বর) তাঁর বাবার নামে আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন নেন তিনি। ফাউন্ডেশনের সভাপতি সচিবের স্ত্রী পারভীন সুলতানা। নিবন্ধনের এক মাস পরই (গত জানুয়ারি) এনজিওটির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য ‘আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দেবে ২৩ কোটি টাকা। বাকি ৬ কোটি টাকা ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।

নীতিমালায় বলা আছে, প্রকল্পে সরকারি সহযোগিতা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট খাতের বেসরকারি সংস্থার অন্তত দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সেটা নেই।

জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাজকল্যাণসচিব খায়রুল আলম বলেন, তাঁরা হাসপাতাল করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন।

যদিও মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকারের উন্নয়ন বাজেটে (২০২৪-২৫ অর্থবছর) প্রকল্পটিকে উচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায়।

খায়রুল আলমের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার চরবর্ণি গ্রামে। সেই গ্রামেই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য আটতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। হাসপাতালে কিডনি, কার্ডিয়াক, চক্ষু ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।

প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, হাসপাতালটি করতে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একে অস্বাভাবিক বলছেন কর্মকর্তারা। সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বোয়ালমারী উপজেলার চরবর্ণি গ্রামের প্রতি শতক জমির দাম সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ধরে হিসাব করলেও ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ জমির মোট মূল্য হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। অথচ প্রকল্পে প্রতি শতক জমির দাম প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির যাচাই কমিটির সভায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য জমির উচ্চ মূল্য ধরা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর সপক্ষে ফাউন্ডেশনকে যুক্তি তুলে ধরতে বলা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দিতেও বলা হয়েছে। তবে তা এখনো জমা দেওয়া হয়নি।

জনগণের করের টাকায় আগেও মন্ত্রী-সচিবেরা নিজেদের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করেছেন। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের মায়ের নামে তাঁর নিজ এলাকা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণকাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। তবে চালু হয়নি। এর ব্যয় ৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া মোজাম্মেল হক খান, জুয়েনা আজিজসহ অন্তত ১০ জন সাবেক সচিব নিজেদের মা-বাবার নামে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছেন।

জনগণের করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবদের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করা নিয়ে গত বছর ‘করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো। এতে দেখা যায়, সরকারি টাকায় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হলেও নানা সংকটে সেসব প্রতিষ্ঠান চালু করা যাচ্ছে না। অভিযোগ আছে, প্রকল্পে উচ্চ ব্যয় দেখিয়ে সেখান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

কর্মকর্তাদের বদলি নিয়েও প্রশ্ন
বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে। ওই দিনই সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাতজন কর্মকর্তাকে বদলি করেন সমাজকল্যাণসচিব। এই বদলি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, এই বদলিতে আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ২২ আগস্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করেন সচিব। এই বদলি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওই সময় ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর মধ্যে ২২ আগস্ট নোয়াখালীর সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে ঢাকায় বদলি করা হয়। আর ঢাকার এক কর্মকর্তাকে নোয়াখালী বদলি করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে সচিব খায়রুল আলম বলেন, বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সচিব যেকোনো সময় বদলি করতে পারেন।

যদিও বদলি ও পদোন্নতিতে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সচিবের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করছেন।

নিজের মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করা নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের একজন সচিব রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করতে পারেন না। এটা অর্থ আত্মসাতের শামিল। এ ধরনের প্রকল্প বাতিল করতে হবে। সচিবকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments