Wednesday, July 3, 2024
Google search engine
Homeপ্রধান সংবাদমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ থেকে কার্যকর নতুন বাজেট

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ থেকে কার্যকর নতুন বাজেট

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ থেকে যাত্রা শুরু হলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট রবিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এবারের বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) সামগ্রিক বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়নের মূল চ্যলেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সরকারি হিসাবেই বলা হচ্ছে— গত ২২ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ শতাংশের ওপরে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছর যখন বাজেট পেশ করা হয়, তখনকার তুলনায় এখন ১০টি জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে, বাজেটে ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে’ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। টিসিবির  ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনিসহ দেওয়া অন্যান্য পণ্য দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করে সরকার।

সরকারের হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম। ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার যখন ছিল  ৯ দশমিক ৪১ থেকে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশের ঘরে, তখন মজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩২ থেকে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশে থেকেছে।

টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ১০টি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে মুগডাল, রসুন ও হলুদের দাম। মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে আছে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে মাছ-মাংসও। দামের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই চালও।

তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ এবং চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীদের ঋণপত্রের ওপর কর হার কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ২ শতাংশ ছিল।

নতুন বাজেটে কালো টাকার মালিকরা অর্থের উৎস নিয়ে কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়েই অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনও করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলেই কোনও কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে কোনও ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকছে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। গত অর্থবছরের মতো করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে ৩ লাখ টাকাই বহাল থাকছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাড়ে ৩ লাখ টাকার পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, এরপর ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরের ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন বাজেটে ১৫টি খাতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খাতভিত্তিক বরাদ্দ অনুযায়ী– শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন খাতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ব্যয় ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, সুদ খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, গৃহায়ণ খাতে ৬ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৫৭৬ টাকা।

নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর আগে গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।

গত বাজেটে জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিদেশ থকে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি থাকলেও নতুন বাজেটে তা থাকছে না। এ সুবিধা কমিয়ে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বছর থেকে এমপিদের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার সরকারের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব বহাল রয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তার ভাষায় নতুন অর্থবছরের বাজেট হচ্ছে— সাধারণ মানুষের জন্য, বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য, সব বাধা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments