Saturday, September 21, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকব্রিটে‌নে নতুন আসা হাজা‌রও বাংলা‌দেশির সংক‌টের নেপ‌থ্যে

ব্রিটে‌নে নতুন আসা হাজা‌রও বাংলা‌দেশির সংক‌টের নেপ‌থ্যে

বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১০ অক্টোবর ২০২৩ !! ১৫:৩৫

বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১০ অক্টোবর ২০২৩ !! ১৫:৩৫
বাংলা‌দেশ থে‌কে অনুন্নত ও অনগ্রসর আফ্রিকার এবং এশিয়ার অন্যন্য দেশ থে‌কে কেয়ার ভিসা, ওয়ার্ক পার‌মিট ও স্টু‌ডেন্ট ভিসায় ব্রিটে‌নে এসে এখানকার জীবনধারার সঙ্গে মা‌নি‌য়ে নি‌চ্ছেন। কিন্তু বিপ‌দে পড়‌ছেন বাংলা‌দেশিরা। বি‌শেষ ক‌রে কা‌জ পাওয়ার ক্ষে‌ত্রে সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়ছেন দেশ‌টি‌তে নতুন আসা বাংলা‌দেশিরা।

এর নেপ‌থ্যের কারণ খুজঁতে গি‌য়ে ভুক্ত‌ভোগী ও তা‌দের প‌রিবার, আইনজীবী, কমিউনিটি নেতা ও ইমিগ্রেশন কনসাল‌টেন্টরা ব‌লে‌ছেন তা‌দের অভিজ্ঞতার কথা।

বাসা ভাড়া এবং চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি এখানে দীর্ঘদিন ধ‌রে বসবাসরত নিজ দেশের মানুষের সহযোগিতার অভাবের কথাও বলেছেন অনেকে। যুক্তরাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতার অভাব, চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং বাংলা‌দেশিদের  পেশাদার নেটওয়ার্ক না থাকার কথাও ব‌লে‌ছেন তারা।

জিয়া রহমান হ‌বিগ‌ঞ্জের ন‌বীগঞ্জ উপ‌জেলার বা‌সিন্দা। তার স্ত্রী কেয়ার ভিসার মূল আবেদনকারী ছি‌লেন। স্ত্রীর ডি‌পেন্ডেন্ট হি‌সে‌বে জিয়া স্ত্রীর সঙ্গে চার মাস আগে লন্ড‌নে আসেন। তি‌নি ব‌লেন, কা‌জের ভিসায় বাংলা‌দেশিরা এ দেশে এসে কাজ না পাওয়ার মূল কারণ কা‌জের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা। বাংলা‌দেশ থে‌কে কেয়‌ার ভিসায় য‌ারা আস‌ছেন তা‌দের বেশিরভা‌গেরই স্বাস্থ‌্যসেবা ও হেলথ কেয়ার সেক্ট‌রে কা‌জের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। অনেকে ভিসা পাওয়ার জন‌্য বি‌ভিন্ন ক্লি‌নিক হাসপাতাল থে‌কে অভিজ্ঞতার সনদের সা‌র্টিফি‌কেট নি‌য়ে আস‌ছেন। কা‌জের অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু কাগু‌জে সনদ নি‌য়ে ভিসা পে‌লেও এদে‌শে এসে কাজ মিল‌ছে না। কারণ কেয়ার গিভার হি‌সে‌বে যে ন্যূন‌তম কাজ ও ভাষার দক্ষতা দরকার তা না থাক‌লে কেয়‌ার হোম কাজ দি‌তে পার‌বে না। অনেক ক্ষে‌ত্রে এদেশে দীর্ঘদিন ধ‌রে বসবাস করা আত্মীয় স্বজনরাও নতুন আসা বাংলা‌দেশি‌দের রেস্টু‌রেন্ট সেক্ট‌রের বাইরে কাজের ক্ষে‌ত্রে সহ‌যোগীতা কর‌তে পা‌রেন না। এদেশে দীর্ঘদিন ধ‌রে বসবাসরত অনেকে ম‌নে ক‌রেন তা‌দের কাজ ও আবাসন সংক‌টের বড় কারণ সদ্য আসা বি‌দেশি কর্মীরা। নিরুপায় নতুন কর্মীরা অপেক্ষাকৃত কম মজুরি‌তে কাজ কর‌তে রাজি হওয়ায় পুর‌নো কর্মীদের কদর ক‌মে‌ছে রে‌স্টু‌রেন্ট সেক্টরসহ নিম্ন আ‌য়ের কা‌জের ক্ষেত্রগু‌লো‌তে।

ইমি‌গ্রেশন প্রতিষ্ঠান স্টা‌ডি এইডের কর্ণধার আহ‌মেদ বখত চৌধুরী রতন জানান, বি‌দে‌শে যাওয়ার ক্ষে‌ত্রে যে‌কোনও উপা‌য়ে শুধু ইমি‌গ্রেশন পার  হ‌তে চাওয়া, শটকার্ট সি‌স্টেম খোঁজার মান‌সিকতা, দীর্ঘমেয়াদী প‌রিকল্পনার অভাব, আগে থে‌কেই কাজের দক্ষতা অর্জনে অনীহা বি‌ভিন্ন দে‌শে নতুন অভিবাসী বাংলা‌দেশি‌দের ‌বিড়ম্বনার মূল কারণ। স্বাধীনতার ৫০ বছ‌রেও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের ম‌তো সরকারি বেসরকারি কোনও পর্যা‌য়েই মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দে‌শে গ‌ড়ে না ওঠাও বড় একটি কারণ বলে উল্লেখ ক‌রেন রতন। যি‌নি আস‌লেই পড়‌তে যাবেন তার স্টু‌ডেন্ট ভিসা, যি‌নি কাজ কর‌বেন তার সেই নি‌র্দিষ্ট ভিসাতেই যাওয়া উচিত। যুক্তরা‌জ্যে আসার পর ভিসার রুট প‌রিবর্তন ব‌্যয়সা‌পেক্ষ।

লন্ড‌নের স‌লি‌সিট‌র্সের কর্ণধার ব্যারিস্টার মো.ইকবাল হো‌সেন ব‌লেন, কেয়ার ভিসা চালুর পরই রাতারাতি এক শ্রেণির কেয়ার হোম মা‌লিক ও তা‌দের দালালরা ভারত বাংলা‌দেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে ব্রিটে‌নে আইনের ফাঁক গ‌লে মানুষ পাচা‌রের রীতিমতো ব্যবসা শুরু ক‌রেন। যে কেয়ার হোম মা‌লি‌কের ৫ জন কর্মীর দরকার তি‌নি ৪০ জন কর্মী এনেছেন। নি‌য়োগদাতার প্রতিশ্রুত কর্ম ঘণ্টা ও বেত‌নের অর্ধেকও পা‌চ্ছেন না আমা‌দের হাজা‌রও কর্মী।

আবার এমন কর্মীও এসেছেন কেয়ার দেওয়ার জন্য প্রশি‌ক্ষিত না, ন্যূনতম ধারণা নেই। তারা যা‌দের কেয়ার দে‌বেন সেসব ব্রিটিশ‌দের কথাও বুঝ‌তে পা‌রেন না। হোম অফি‌সের উচিত ছিল প্রথম থে‌কেই যি‌নি কেয়ার ভিসায় আস‌ছেন কর্মী হি‌সে‌বে তার দক্ষতা যাচাই বা নি‌শ্চিত করা।

এখন ৩০ লাখ টাকা খরচ ক‌রে ব্রিটে‌নে এসে কর্মহীন বেকার অবস্থায় অসহনীয় দু‌র্ভো‌গে দিন কাট‌ছে হাজার হাজার কর্মীর। যা‌দের ম‌ধ্যে অন্তত হাজার খা‌নেক বাংলাদেশি আছেন, যার‌া কাজ না পাওয়ার কার‌ণে ভিসা বা‌তি‌লের শঙ্কায় আছেন। অন‌্যান‌্য কাজের ভিসার ক্ষে‌ত্রেও একই অবস্থা।

লুট‌নের সমাজকর্মী মাহবুবুল করীম সু‌য়েদ ব‌লেন, আমা‌দের মানুষ শুধু যে‌কোনোভা‌বে ভালো কোনও দে‌শে গি‌য়ে কেবল ঢুক‌তে চান। তারপর দেশ‌টি‌তে গি‌য়ে কী কর‌বেন তার কোনও প্রস্তু‌তি থা‌কে না।

গত বছর কেবল ভারত থে‌কে ৩০ হাজার, নাইজেরিয়া থে‌কে ১৮ হাজার ও জিম্বাবু‌য়ে থে‌কে ১৭ হাজার কর্মী কেয়ার ভিসায় ব্রিটে‌নে এসে‌ছেন।

আফ্রিকার বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে হাজার হাজার কেয়ার ওয়ার্কার এদে‌শে প্রতি বছর আস‌ছে। তারা বেকার নেই। কারণ তাদের কা‌জের দক্ষতা, ভাষার দক্ষতা র‌য়ে‌ছে।

বাংলা‌দেশ থে‌কে কেয়ার ভিসায় আস‌তে আমা‌দের দেশীয় দালালদের কার‌ণে ২৫ হাজার পাউন্ড খরচ হয়। অথচ অন‌্যান‌্য দে‌শের মানুষ অনেক কম টাকায় আস‌তে পা‌রে।

ইংল্যান্ডে কেয়ার হোমের ভিসায় কোনও কিছু চিন্তা না ক‌রেই ২০ থে‌কে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে আসছেন। কিন্তু ওয়ার্ক পার‌মিট স‌ঠিক না হওয়ায় নি‌য়োগদাতা কাজ না দি‌তে পারায় অসংখ‌্য বাংলা‌দেশি এখানে মান‌বেতর জীবনযাপন কর‌ছেন। এ ছাড়া বৃটিশ সরকার নতুন আইন করেছে যদি অবৈধ কোনও ওয়ার্কারকে কোনও নি‌য়োগদাতা কাজ দেয় , ইমিগ্রেশন কাজের জায়গায় কোনও অবৈধ লোক পায় তাহলে সেই কর্মীকে ৪৫ হাজার পাউন্ড (£ 45,000 ) জরিমানা করবে। ‌আগে ছিল যা ছিল ১৫ হাজার পাউন্ড। জ‌রিমানার ভ‌য়ে মা‌লিকরা অর্ধেক মজুরি‌তেও কাজ দি‌চ্ছেন না।

তাই বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন বুঝে শুনে, জেনে শুনে, সত্যিকার সঠিক ওয়ার্ক পারমিট নি‌য়ে আসবেন। যে কোম্পানি আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট দেবে সেই কোম্পানিতে আপনার কাজ থাকতে হবে। এছাড়া যারা কেয়ার হোমের ওয়ার্ক পারমিটে আসছেন, কোনও কেয়ার হোমের কোম্পানি বৃটিশ আইন মোতাবেক কারও কাছ থেকে টাকা নিতে পারবে না । কোম্পানিগু‌লো নি‌জেরা ২০০ পাউন্ড খরচ করে ওয়ার্ক পারমিট ফ্রি দিয়ে থাকে। কেয়ার হোমের ভিসায় আসলে ড্রাইভিং জানা থাকতে হবে এবং ইংলিশ কথা বুঝ‌তে ও বলতে হবে। কেয়ারারের সকল কাজ প্রফেশনালভাবে জানা থাকতে হবে। না হ‌লে কাজ মিল‌বে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments