Sunday, September 22, 2024
Google search engine
Homeজাতীয়বাতিল হতে পারে সাইবার সিকিউরিটি আইন

বাতিল হতে পারে সাইবার সিকিউরিটি আইন

মতপ্রকাশ ও মানবাধিকারের জন্য হুমকি হিসেবে সমালোচিত সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি দীর্ঘদিনের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘রিফর্ম’ আহ্বানের মধ্যে নতুন করে আবারও শুরু হয়েছে সেই দাবি সামনে আনা। ভুক্তভোগী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুজন উপদেষ্টা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নাগরিকদের অনেকেই এই আইনে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই আইনটি বাতিল চান।

২০২৩ সালে বাংলাদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-ডিএসএ পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন প্রণয়নের অনুমোদন দেয় তৎকালীন মন্ত্রিসভা। এই নতুন আইনটির নাম করা হয় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ । সেসময় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাম রহিত করে তার পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে, অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল, সেটা কমানো হয়েছে, যেখানে উপধারা দিয়ে পুনরায় অপরাধ করলে সাজা ডবল হয়ে যেতো, সেটা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।’

পুলিশ ও সাইবার ট্রাইব্যুনালের হিসাব মতে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর থেকে দেশে এই আইনে সাড়ে ৭ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। ওই সব মামলা পুরনো আইনেই চলমান। তবে গত সেপ্টেম্বরে সাইবার নিরাপত্তা আইন হওয়ার পর প্রথম দুই মাসে নতুন এই আইনে সারা দেশে ১২১টি মামলা হয়েছে। পরবর্তী হিসাব সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে জায়গাগুলোকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং জানতে চাইলে আইন বিশ্লেষকরা যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করেন তাহলো— আইন ও নীতিমালার অধীনে গঠিত ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির কার্যক্রমের প্রতি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় বা সংস্থাগুলো কর্তৃক তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত থাকা, একই বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা করার প্রবণতা, বিচার-পূর্ব কারাবাসের সময় সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতির অনুপস্থিতি, বিচার-পূর্ব কারাবাসকে পরবর্তী সময়ে শাস্তি হিসেবে গণ্য করা, অপরাধের বিপরীতে ধারাগুলোর শাস্তির বিধান বেশিরভাগ মাত্রাতিরিক্ত, অসম, অনুপাতহীন এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ থাকা, সাইবার ট্রাইব্যুনালের আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না থাকা এবং মিথ্যা হয়রানিমূলক কোনও মামলার প্রতিকার আইনে না থাকা।

এত ধরনের ব্যত্যয়সহ এই আইন বাতিল, নাকি সংস্কার করা দরকার— জানতে চাইলে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনে রাখা দরকার বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলযোগ্য, কোনোভাবেই সংশোধনযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ এবং বেআইনি, নাগরিকদের অংশগ্রহণবিহীন এই আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং খুব দ্রুত খসড়াটি আইনে পরিণত করা হয়েছিল। একইসঙ্গে মনে রাখা দরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুজন উপদেষ্টা তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিলেন এবং যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনসমর্থন পেয়েছেন, সেই নাগরিকদের অনেকেই এই আইনে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। সুতরাং, আইনটি বাতিলের ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের দায়িত্ব রয়েছে।’

কেন বাতিল প্রয়োজন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনটি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় সব ধারার সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ও অপ্রতুলতা রয়েছে। আইনে অনেক অপরাধের সংকীর্ণ সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এবং অপরাধের অভিপ্রায় সম্পর্কে পর্যাপ্ত নজর রাখা হয়নি। এবং আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত চুক্তির বিকশিত মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়নি।’

‘এই আইনে দায়ের করা মিথ্যা মামলা বাতিল এবং আইনটি সংশোধনের যে ধোঁয়া শুরু হয়েছে নাগরিক ও উপদেষ্টাদের মাঝে, তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং অবশ্যই উপদেষ্টা কাউন্সিলকে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিল করতে হবে। অবশ্যই তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের শিকার ব্যক্তিদের মুক্ত করতে হবে’, বলেন তিনি।

এদিকে শনিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক মতবিনিময় সভা করেন। সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে— সন্ত্রাস দমন আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করা হবে।

৯ আগস্ট উপদেষ্টাদের প্রথম সভার পর সাইবার সিকিউরিটি আইন থাকা না থাকা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কতগুলো ক্ষমতা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে পড়লে অসুবিধা হয় না। কিন্তু সরকার অগণতান্ত্রিক হলে অপপ্রয়োগ হয়। কোন কোন বিধান অপপ্রয়োগের ঝুঁকি আছে, তা চিহ্নিত করে বাতিলের বিষয়ে আলাপ হয়েছে।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments