Saturday, June 29, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকপশ্চিমবঙ্গ বিরোধিতা করলেও ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন সম্ভব?

পশ্চিমবঙ্গ বিরোধিতা করলেও ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন সম্ভব?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ে গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন এবং তিস্তা নদী প্রকল্প বিষয়ে দুটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এরমধ্যে ‘গঙ্গা পানি চুক্তি’র নবায়নের জন্য যৌথ কারিগরি কমিটির আলোচনা শুরু এবং তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতের একটি টেকনিক্যাল দল বাংলাদেশ পরিদর্শন করবে– এই মর্মে দুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেন, তার রাজ্যের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আলোচনা করেনি। ফলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে সম্মতির ভিত্তিতে আন্তঃরাষ্ট্র উদ্যোগ সবচেয়ে টেকসইভাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে যদি রাজ্যের সম্মতি না থাকে, তারপরও তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। অবশ্য এতে গঙ্গা চুক্তি নবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘আন্তঃনদী সহযোগিতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের মধ্যে সমঝোতা একান্ত কাম্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি নিয়ে যতবার আলোচনা হয়, প্রতিটি সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাই যার মধ্যে রাজ্যের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকেন।’

তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয় রয়েছে। একটি তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এবং অপরটি হচ্ছে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।’

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুই দেশ একমত আছে। কিন্তু এখনও এটি সই হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ একটি সমীক্ষা করেছিল। এর মাধ্যমে তিস্তা নদীতে যে ভাঙ্গণ হয় সেটি প্রতিরোধ এবং বর্ষা মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয় নিয়ে সমীক্ষা হয়।’

বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করলে এর ফলাফল অনেক বেশি টেকসই হবে। কারণ নদীর ক্ষেত্রে শুধু একটি অংশ নয়, বরং গোটা সিস্টেম নিয়ে কাজ করলে সবচেয়ে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘সবপক্ষের সহযোগিতা এখানে কাম্য। তবে যদি পশ্চিমবঙ্গ তিস্তা চুক্তির বিরোধিতাও করে, তবে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।’

আর গঙ্গা পানি চুক্তির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘নবায়ন আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। ওই আলোচনায় ভারতীয় দলে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি থাকাই স্বাভাবিক।’

পানি নিয়ে রাজনীতি

পানি নিয়ে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা চলছে। উজান ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে এই বিরোধ এখন খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত শুধু গঙ্গা পানি চুক্তি করা গেছে।

এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে আন্তঃরাষ্ট্র পানি সহযোগিতা এখন জটিল আকার ধারণ করেছে।’

ভারতের কেন্দ্রীর সরকার ও পশ্চিম বঙ্গের সরকারের মধ্যে বিরোধের কারণে বিজেপি সরকারের যেকোনও দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে মমতা ব্যানার্জি বাধা হয়ে দাঁড়াবেন বলেও মনে করেন এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র হিসেবে ঢাকা সবসময় দিল্লির সঙ্গেই যোগাযোগ রাখবে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলাদেশ কোনও ভূমিকা রাখতে পারবে না।’

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতার কারণে তিস্তা প্রকল্প বা গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নে কী প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে সবার সহযোগিতা পেলে ভালো। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সহযোগিতা না পাওয়া গেলেও প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

গঙ্গা পানি নবায়নের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে বিদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ও চুক্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ফলে অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চুক্তি করা সম্ভব। কিন্তু এর রাজনৈতিক ঝুঁকি আছে। আর এ জন্যই বিজেপি বা এর আগে কংগ্রেস সরকারও তিস্তা চুক্তি সই করেনি।’

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি সরকার এবং এবার তারা এ ঝুঁকি নেকে কিনা সেটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক রসায়নের ওপর নির্ভর করবে বলেও মনে করেন তিনি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments