Saturday, September 21, 2024
Google search engine
Homeজাতীয়নতুন বছরে প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানো কি সম্ভব?

নতুন বছরে প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানো কি সম্ভব?

আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০২৫) বাড়ছে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা। এছাড়া পাঠ্যবইয়ে সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। এসব কারণে ছাপার কাজে পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যদিও এনসিটিবি’র দাবি, বছরের শুরুতেই সব বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনও ছাপা কাজের টেন্ডার হয়নি। ফলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বই দেওয়া অসম্ভব।’

জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘পাঠ্যবই পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হচ্ছে। তবে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হবে না। ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার পরও যে সময়টুকু পাওয়া যায়, তাতেও পরিমার্জনের অনেক কাজ করে ফেলা যায়।’ তিনি দাবি করেন, বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই যাবে। পরিবহনের কারণে হয়তো কোনও কোনও ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দিন যেতে পারে। ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান পুনরায় জোর দিয়ে বলেন ‘বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানো নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই।’

জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য অন্তত ৩৫ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপার প্রস্তুতি নিয়েছে এনসিটিবি। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপাতে সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা। এবার পাঠ্যবই বইয়ের সংখ্যা বাড়ায় খরচও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের চাহিদা পাঠাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবি। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘দেশের সব শিক্ষার্থীর মাঝে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণ করে ১ জানুয়ারির মধ্যে সরবরাহের বিষয়টি সরকারের একটি অগ্রাধিকারভুক্ত ও জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। অন্যান্য বছরের মতো ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি ট্রেড স্তরের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক নবম ও দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) দেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের বই ছাপবে এনসিটিবি। ২০২৩ সালের যে বই ২০২৫ সালে দেওয়া হবে তাতেও পরিমার্জন করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে অতিরঞ্জিত কিছু বিষয় যেমন বাদ যাবে, তেমনই কিছু বিষয় যুক্ত হবে। হাতে সময় রয়েছে তিন মাসের কিছু বেশি, এই সময়ের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করে শেষ করা কঠিন।

মুদ্রণ মালিক সমিতির বর্তমান নেতারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেছেন, টেন্ডার শুধু কল করলে হবে না। আমাদের (মুদ্রণ মালিকদের) পাণ্ডুলিপির একটি সফট কপি জমা দিতে হবে। পাণ্ডুলিপির প্রুফ কপি জমা দেবো। মূদ্রণ আদেশ দেবে, তা না হলে তো কেউ ছাপা শুরু করতে পারবে না। টেন্ডার আংশিক বাতিল করা হয়েছে, আংশিক জীবিত রাখা হয়েছে। সব মিলিয় মনে হচ্ছে— সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই, কিন্তু পরিপক্কতার অভাব রয়েছে। ফরেন কারেন্সির ডলার ক্রাইসিস, অনেক দ্রব্য আমদানি করা যায় না, বিলাসদ্রব্য হিসেবে। বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকলে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারকে বই ওঠাতে হলে প্রিন্টার্সকে কম করে ৯০ দিন সময় দিতে হবে।’  

গত ১ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রে এনসিটিবি জানায়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে এরইমধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। যতদূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি আগের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ সালের মতো হবে। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যবইগুলো ২০২৪ সালব্যাপী বহাল থাকবে। ২০২৫ সালে যথা সম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবই সরবরাহ করা হবে।’

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরত যাওয়া হচ্ছে। আর সেই হিসাবে ২০২৩ সালের বই তৈরি করা আছে। সে কারণে অনেক বেশি সময় লাগবে না। তবে পরিমার্জন কতটা হবে তার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু। বেশি পরিমার্জন হলে সঠিক সময়ে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। যেসব বই পরিমার্জন হবে, সেসব বই পরে দিতে হবে। তবে এনসিটিবির দাবি, বছরের শুরুতেই বই দেওয়া সম্ভব হবে।

এনসিটিবি জানায়, ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (২০২৬ সালের অনুষ্ঠেয় পরীক্ষা) নেওয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে আগের ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২’ এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবই (অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত পুস্তক) শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২’ অনুসারে প্রণীত শাখা— বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাভিত্তিক এই পাঠ্যবইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে।

যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে, তাদেরকে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে মূদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন বই দেওয়া অসম্ভব। উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, মার্চ-এপ্রিলের আগে বই দেওয়া যাবে না। এখনও রিটেন্ডার হয়নি। টেন্ডার এক্সিকিউশন করা, পাণ্ডলিপি পরিবর্তন করা ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব হবে বলে মনে হয়  না। তাহলে জানুয়ারি ১ তারিখে বই দেবে কেমনে? জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও বই দেওয়া অসম্ভব।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments