বাংলার প্রতিচ্ছবি । ২৯আগষ্ট ২০২৪ !! ১৯:২৬
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে ১৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন লিয়াকত আলী লাকী। দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ কাঁধে নিয়ে কর্মীদের জন্য বৈষম্যমূলক পরিস্থিতেও দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি।
কর্মীদের অভিযোগ, শিল্পকলা একাডেমির পুরো কাঠামো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ বা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কোনও সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেননি লাকী। ফলে শিল্পকলা একাডেমি নিজ নিয়মে চলতে পারেনি। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন মহাপরিচালক হিসেবে শিল্পাঙ্গনের কাউকে দেওয়া হলে তার পক্ষে কাজ করা কঠিন হবে। সে কারণে কর্মীদের দাবি, এক বছরের জন্য কোনও একজন প্রশাসক বসানো হোক; যিনি একাডেমির কাঠামো ঠিক করে শিল্প বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন।
লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মতো তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত বছরের জুনেও ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ’ ব্যানারে লিয়াকত আলী লাকীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি অংশ।
কেবল অভিযোগেই সীমিত ছিল না, ২০২২ সালে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে তলব করে দুদক।
তার বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমির পরিষদের সদস্যদের সিদ্ধান্ত না মানা, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না শোনা, ইচ্ছেমতো বদলি, পরিষদকে না জানিয়ে অফিস আদেশ দেওয়া, অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ নানা অভিযোগ আছে। একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি চলে নিজস্ব আইনে। পাশাপাশি একাডেমির প্রশাসনিক কার্যক্রম নির্ধারিত হয় পরিষদের মাধ্যমে। ২৫ সদস্যবিশিষ্ট এই পরিষদের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করেন পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিযুক্ত একাডেমির মহাপরিচালক।
পুরো সিস্টেমকে নষ্ট করে দিয়ে তিনি নিজের মতো সব চালিয়েছেন অভিযোগ করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি প্রতিবছর ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অগ্রীম তুলে নিতেন। যে কর্মকর্তার নামে তুলতেন, তাকে সেটি অবহিতও করতেন না অনেক সময়। এমনকি ২০২১ সালে একই তারিখে একাধিক ভাউচারে (২৭ জুন) তুলে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।
একাডেমির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, ভুয়া ভাউচারে অর্থ উত্তোলন একাডেমিতে বহুল চর্চিত প্রক্রিয়া। এর শিকার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারিনি। কর্মীদেরও প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রত্যেককে তিনি লাগিয়ে রাখতেন। কারোর সঙ্গে কারোর ভালো সম্পর্ক না থাকে, বিশ্বাস না থাকে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হতো। তিনি অগ্রীম টাকা তুলতে চাইলে যারা সম্মতি দিতো না, তাদের তিনি কোনও কাজে রাখতেন না। ফলে বৈষম্যের শিকার একটা গোষ্ঠী আগে থেকেই আছে।
তা ছাড়া এই ১৩ বছরে অনেককে কাজ থেকে বের করে দেওয়া, জোর করে ক্ষমতা খাটিয়ে কোনও কাজ না করতে দেওয়ার মতো ঘটনা অনেক আছে বলে জানান তারা।
এই ভেঙে পড়া কাঠামো কোনও প্রশাসক ছাড়া শিল্পীর দ্বারা সামলে নেওয়া বেশ কঠিন উল্লেখ করে শিল্পকলা একাডেমির এক কর্মকর্তা এহসানুর রহমান বলেন, অনেক দিন পর আমরা আমাদের অফিসটাকে রাহুমুক্ত করতে পেরেছি। আমরা এখানে এখন একজন মহাপরিচালক চাই, যিনি অবশ্যই শিল্পীদের মধ্য থেকে না হলে ভালো।
কেন এরকম মনে করছেন, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রাণের দাবি। কারণ আমরা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাণ ফেরাতে চাই। এ মুহূর্তে একাডেমির যে অবস্থা, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আবারও শক্তিশালী একটি কাঠামো দাঁড় করাতে হলে এক বছরের জন্য হলেও একজন আমলা নিয়োগ হলে ভালো হয়।
এদিকে কবে নাগাদ একাডেমি মহাপরিচালক পেতে যাচ্ছে, এ প্রশ্নে সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ জানান, মহাপরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেকোনও মুহূর্তে ঘোষণা হয়ে যাবে। তবে কে হচ্ছেন মহাপরিচালক তা আমরা বলতে পারবো না, উপদেষ্টা জানেন।
কর্মীরা শিল্পী চান না, আমলা চান বিষয়টা কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন, একাডেমির এই অবস্থায় সেটা হলে ভালো হয়। কিন্তু কী হতে চলেছে তা এখনও বলতে পারছি না।