Saturday, June 29, 2024
Google search engine
Homeদেশছাদ ফুটো করে পালিয়ে পুলিশে ধরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি

ছাদ ফুটো করে পালিয়ে পুলিশে ধরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি

বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে রশির মাধ্যমে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ধরা পড়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ জুন) গভীর রাতে এ ঘটনার পরপরই পুলিশ শহরের চেলোপাড়ার চাষি বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।

জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দিয়েছেন। বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে এ ঘটনায় জেলার সদর থানায় একটি মামলা হয়।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, সুরক্ষিত জেলের কনডেম সেল থেকে চার ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (এডিএম) প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত আইজি প্রিজনের নেতৃত্বে তারা তদন্ত কমিটি গঠন করবেন।

পলাতক ও গ্রেফতার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইস্রাফিল খাঁর ছেলে আমির হামলা ওরফে আমির হোসেন (৩৮), বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ইসমাইল শেখ চাঁদ মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (২৮) এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ও বিএনপি সমর্থিত কাহালু পৌর মেয়র আবদুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১)।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা কারাগারের পূর্ব-উত্তর কোণে তিনটি কনডেম সেল রয়েছে। সেখানে ১৩ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিকে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে ওই চার জন সুরক্ষিত জেলের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে বিছানার চাদর দিয়ে রশি বানিয়ে ছাদে ওঠে। এ সময় তাদের গায়ে কয়েদির কোনও পোশাক ছিল না। এরপর তারা ওই রশি বেয়ে উঁচু প্রাচীর থেকে নেমে পাশেই করতোয়া নদীর সেতু পার হয়। পরে তারা নিকটস্থ চেলোপাড়ার চাষি বাজার এলাকায় সমবেত হন। এরপর রাত সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে সদর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর, আমির হোসেন, ফরিদ শেখ ও জাকারিয়া জানান, তারা সকলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। জেলের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে তারা পালিয়ে এসেছে। পরে তাদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অফিসে আনা হয়। পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা হবে। এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে আবারও বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, মো. জাকারিয়া বগুড়ার কাহালুর শিশু নাইমকে হত্যা ও লাশ ভাটায় পুড়িয়ে ফেলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। এ ছাড়া নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও আমির হোসেন চারটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তারা কীভাবে জেলের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে পালিয়ে যায় সেসব তদন্তে প্রকাশ হবে।

দুপুরে সদর থানায় মামলা লেখার সময় দেখা হয় জেলারের সঙ্গে। এ সময় তিনি তার নিজের নাম বলতেও রাজি হননি। বলেন, ‘মামলা হলে সব জানতে পারবেন।’

এদিকে, জেল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে রাজশাহী ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন বগুড়ায় আসেন। এ ব্যাপারে বগুড়া জেল সুপার, জেলার কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ডিআইজি প্রিজন জানান, অতিরিক্ত আইজি প্রিজনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া এসব ব্যাপারে পরবর্তীতে জানানো হবে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্তে এডিএমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বগুড়া কারাগার, পুলিশ, র‌্যাব, গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি।

অন্যদিকে সুরক্ষিত বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ কীভাবে ছিদ্র করে ফাঁসির আসামিরা পালিয়ে গেলেন এবং তাদের গায়ে জেলের পোশাক না থাকা নিয়ে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে বগুড়া জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। তারা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত এবং অবহেলা বা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments