Saturday, September 21, 2024
Google search engine
Homeখেলাক্রিকেটকী উপায়ে নিরসন হবে বিসিবির সংকট?

কী উপায়ে নিরসন হবে বিসিবির সংকট?

পদত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন পাপন

সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শুধু তিনিই নন, ক্রিকেট বোর্ডের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালকের খোঁজও মিলছে না। এই অবস্থায় স্থবির দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ক্রিকেটের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নাজমুল হাসান পদ ছাড়তে সম্মত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু পাপন সরে দাঁড়ালেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কেননা বিসিবির গঠনতন্ত্রে বোর্ড সভাপতি পদত্যাগ করলে পরবর্তী করণীয় কী, সেই ব্যাপারে কোনও ব্যাখ্যা নেই।

গত সপ্তাহে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বিসিবির আট সদস্যের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেছেন, সেখানে পরিচালক ছিলেন সাতজন। এর বাইরেও আরও দুয়েকজন পরিচালক আছেন, যারা বর্তমান পরিস্থিতিতেও বিসিবিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে গঠনতন্ত্রের ম্যারপ্যাঁচে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিসিবির সাবেক পরিচালক, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সিরাজউদ্দিন আলমগীর বলেছেন, ‘আমার মনে হয় সংবিধানে বেশ কিছু বিষয় অনেকটা জোর করেই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই গঠনতন্ত্রে। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তাকে বোর্ড পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়। আর পরিচালকদের মধ্য থেকেই একজন সভাপতি নির্বাচিত হন। এখানে কথা হচ্ছে, একজন পরিচালকের পদ শূন্য হলে কী করতে হবে সংবিধানে পরিষ্কার লেখা আছে, পুনর্নির্বাচন করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি বিশেষ কারণে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু তিনি (নাজমুল হাসান পাপন) যদি পদত্যাগ করেন কিংবা পুরো বোর্ড যদি ভেঙে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সুযোগ নেই। আমাদের গঠনতন্ত্রে এমন কিছু বলা নেই।’

বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৩.২ এর ক-তে বলা হয়েছে সভাপতি পদের প্রার্থীকে অবশ্যই পরিচালক হতে হইবে। সভাপতি একজন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ কৃর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। অনুচ্ছেদ-১৯ এ বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের কোনও পদ শূন্য হলে সেই পদ পূরণের লক্ষ্যে পরিচালনা পরিষদের অনুরোধক্রমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং ওই পদ পূরণের জন্য অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী উক্ত কমিশন শূন্যের সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নির্বাচনকে ঘিরে গঠনতন্ত্রে আরও অনেক কিছু থাকলেও সভাপতির শূন্য পদের বিপরীতে তিনি কীভাবে নির্বাচিত হবেন, সেই ব্যাপারে কিছু বলা নেই। ফলে বিসিবির গঠনতন্ত্র ও আইসিসির নিয়মের বাইরে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনে সরকার হস্তক্ষেপ করলে সংকট আরও বাড়বে। অতীতে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে তাদের মতামত ও বর্তমান পরিস্থিতি আইসিসিকে জানিয়েই বিসিবিকে যা করার করতে হবে।

সিরাজউদ্দিন আলমগীরও মনে করেন গঠনতন্ত্র মেনে এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়, ‘আমার মতে এই সমস্যার গঠনতান্ত্রিক সমাধান আসলে নেই। আমি নিশ্চিত নই, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিশেষ কোনও ক্ষমতা আছে কি না। কারণ সবগুলো ফেডারেশন তো এনএসসির অধীনে। সেই জায়গা থেকে বিশেষ কোনও ক্ষমতা থাকতেও পারে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক পদত্যাগ করলে নতুন কাউন্সিলর দিয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে কোনও সুস্পষ্ট বিধান নেই। তবে যাই করতে হবে, সেটি সাধারণ পরিষদের সভা ডাকার মাধ্যমে করতে হবে। এর বাইরে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড বা নতুন বোর্ড গঠনের কথা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক জাতীয় দলের ক্রিকেটার বলেছেন, ‘গঠনতন্ত্রে এমন ত্রুটির জন্য দায়ী কারা? অবশ্যই এই দায় বোর্ডে থাকা প্রত্যেকটা পরিচালকের। আমি যখন নির্বাচন করেছিলাম, তখনও আমি এই ব্যাপারে সোচ্চার ছিলাম। অবশ্যই এই ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। সভাপতির পদের জন্য যেহেতু কোনও কিছু বলা নেই, আমার ধারণা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরামর্শ মেনেই এখন বোর্ড পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। জটিল কোনও কিছু না করে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু করা যাবে না। আর যেটাই করা হোক না কেন, সেটি যেন আইসিসির অনুমোদন সাপেক্ষে করা হয়।’

এদিকে বর্তমানে বিসিবি বোর্ড পরিচালকদের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত দুজন পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি প্রকাশ্যেই আছেন। এ ছাড়াও ক্যাটাগরি-১, ২, ৩ (আঞ্চলিক জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্লাবের প্রতিনিধি ও অনান্য প্রতিনিধি) সব জায়গা থেকে বেশ কয়েকজন পরিচালকও সরব আছেন। নাজমুল হাসান পাপন ক্যাটাগরি-২ থেকে নির্বাচিত ছিলেন। একই ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহবুব উল আনাম। এই অবস্থায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে নির্বাচিত কেউ বোর্ড সভাপতি হলে হতে পারে। অথবা উপস্থিত বাকি পরিচালকদের মধ্য থেকে কাউকে সহ-সভাপতির প্রস্তাব করে তার অধীনে বিসিবির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments