বাংলার প্রতিচ্ছবি । ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ !! ০২:৩৯
কুষ্টিয়ায় মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন পরিবহনশ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে স্থানীয় সব রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
এতে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া-প্রাগপুর, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া-খুলনা-যশোর, কুষ্টিয়া-বরিশাল, কুষ্টিয়া-রাজশাহী, কুষ্টিয়া-পাবনা-সিরাজগঞ্জ রুটসহ দেশের প্রায় সব জেলার সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ আছে। শুধু ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসগুলো চলছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মবিরতির ডাক দেয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে মিরপুর উপজেলার আমলা এলাকায় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক সড়কে দুটি বাস ভাঙচুর করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। এর প্রতিবাদে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
শুক্রবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল হক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে বৈঠক শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর রুটের ভেড়ামারা এলাকায় হিসনা পরিবহনের বাসের গ্লাস ভাঙচুরসহ চার শ্রমিককে মারধর করেন স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। এ ঘটনার জেরে অভ্যন্তরীণ রুটের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন শ্রমিকদের মারধর ও বাসের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হয়। তবে একই দিন বিকালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে মিরপুর উপজেলার আমলা এলাকায় আবারও দুটি বাসের গ্লাস ভাঙচুরের পাশাপাশি শ্রমিকদের মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় যৌথ সভা করেন মালিক-শ্রমিকেরা। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল হক বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল আদালত নিষিদ্ধ করেছেন। আইন না মেনে তারা ইচ্ছামতো মহাসড়কে চলাচল করেন। তা ছাড়া বাসস্টপেজ থেকেও তারা সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী তোলা হয়। এর প্রতিবাদ করলে পরিবহনশ্রমিকদের ওপর চড়াও হন অটোরিকশার চালকরা। এ জন্য নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিকরা কাজে যেতে চাচ্ছেন না। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন।’
কুষ্টিয়া বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হাসান আবুল ফজল সেলিম বলেন, ‘শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন। তারা কাজে না গেলে পরিবহন রাস্তায় গড়াবে না। তাই তাদের প্রতিবাদকে আমরাও সমর্থন জানিয়েছি। যেহেতু ঢাকাগামী বাসগুলো আগেই টিকিট বিক্রি করেছে, তাই সেগুলো শুধু একদিন (শুক্রবার) চলাচল করবে।’
এদিকে, ভেড়ামারা সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সিএনজির মালিক ও চালক সানোয়ার হোসেন দাবি করেন, ‘পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের উচ্ছেদ করার জন্য শ্রমিকরা উঠেপড়ে লেগেছেন। উল্টো অটোরিকশার চালকরা কুষ্টিয়া শহরে গেলে চাবি কেড়ে নিয়ে তাদের মারধর করা হয়। আবার তারাই বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।’
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার বলেন, ‘এ নিয়ে একবার বসা হয়েছে। তারপরও কেন এমনটা ঘটলো, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে সবাইকে ডাকা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’