ঢাকা | ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

ডাচ্-বাংলার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে টাকা আত্মসাৎ, এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হচ্ছে মামলা

প্রকাশের তারিখ: নভেম্বর ১৩, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি : খুলনার আড়ংঘাটা বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি’র ‘মুনমানহা’ নামের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ লাখ টাকা "আত্মসাৎ' করার অভিযোগে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “খুলনায় দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগটি পাওয়ার পর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা হয়।
“যাদের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, তারা সবাই নিতান্তই দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ।”

দুদক যাদের আসামি করে মামলা করতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. শিরিন এর নাম রয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর এস এম সোহেল মাহমুদ ‘মুনমানহা’ নামের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা পরিচালনার অনুমোদন পান। স্থানীয় স্বল্পশিক্ষিত, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই ছিলেন শাখাটির মূল গ্রাহক। তারা নিয়মিত ব্যাংক হিসাব খোলা, অর্থ জমা-উত্তোলন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও মেয়াদি আমানত সংরক্ষণসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এজেন্ট পরিচালনকারী এস এম সোহেল মাহমুদ, টেলার মো. আব্দুল হান্নান এবং আউটলেট রিলেশনশিপ অফিসার (ওআরও) পলি খাতুন দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমার রসিদ দিলেও ব্যাংকে সেই অর্থ জমা করতেন না। পরে তারা ৯৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬৬ টাকা আত্মসাৎ করে শাখা বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান বলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

অর্থ ফেরত না পেয়ে প্রতারিত গ্রাহকরা খুলনা রিজিওনাল অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন, বলে এতে বলা হয়।

দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখতে পায়, ৫০ জন গ্রাহক ম্যানুয়াল ভাউচার ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৯০ টাকা জমা করেছিলেন, যার মধ্যে ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৪ টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয়। অবশিষ্ট ৯৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং পলিসি-২০২২ (অনুচ্ছেদ ১৪.০) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গাইডলাইন অনুযায়ী, নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্ট কর্তৃক কোনো অনিয়ম বা প্রতারণা ঘটলে গ্রাহকের অর্থ ফেরতের দায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। তবে ঘটনাটির প্রমাণ মিললেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়নি।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দায়িত্বে অবহেলা ও তদারকির ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে।

অনুমোদিত মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- মুনমানহা এজেন্ট শাখার প্রোপাইটর এস এম সোহেল মাহমুদ, টেলার মো. আব্দুল হান্নান, আউটলেট রিলেশনশিপ অফিসার (ওআরও) পলি খাতুন, সাবেক এরিয়া ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম, সাবেক রিজিওনাল হেড এইচ. এম. কামরুজ্জামান, এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান আহাম্মেদ আসলাম আল ফেরদৌস, ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন কমপ্লায়েন্স ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান মো. ফরহাদ মাহমুদ, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) মো. সাহাদাৎ হোসেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. শিরিন।

তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনের বক্তব্য জানা যায়নি।
কমেন্ট বক্স