ঢাকা | ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

দুবলার চরে তিন দিনব্যাপী রাসপূজা ও পুণ্যস্নান উৎসব সম্পূর্ণ

প্রকাশের তারিখ: নভেম্বর ৬, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
প্রিন্স মন্ডল অলিফ (বাগেরহাট প্রতিনিধি) : সুন্দরবনের গভীর উপকূলীয় অঞ্চল আলোরকোলের দুবলার চরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘রাসপূর্ণিমা, পূজা ও পুণ্যস্নান উৎসব’ আজ সকালে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষ উপকূলের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে সারিবদ্ধভাবে বসে ফুল, ফল, ডাব, কলা ও পূজার সামগ্রী নিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন। এ সময় উপকূলের আকাশ-বাতাস ভরে ওঠে ভক্তদের আবেগে—হাতজোড় করে প্রণাম, গুরুদেবের চরণে আশীর্বাদ গ্রহণ এবং ভক্তদের চোখের অশ্রুতে। হাজার হাজার উপস্থিত ভক্তের জন্য এটি ছিল এক অনন্য আধ্যাত্মিক মুহূর্ত।

বিশ্বাস করা হয়, সাগরে পুণ্যস্নান পাপ মোচন করে এবং পূণ্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে জাপান, কানাডাসহ প্রায় ১৫টি দেশের ভক্ত ও পর্যটক এ মহাউৎসবে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাসমেলার উদ্বোধন করেন। বিকেলে মতুয়া সম্প্রদায়সহ হাজারো নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে বিশাল এক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাগর তীরে স্থায়ী মন্দির প্রাঙ্গণে বিকেল থেকে রাতভর চলে পূজা-অর্চনা। ঢাক, ঢোল, তবলা ও সানাইয়ের তালে নৃত্য-গীতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো উপকূল এলাকা।


সৌরবাতি ও পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত দুবলার চর যেন হয়ে ওঠে এক টুকরো স্বর্গভূমি। ভক্তদের বিশ্বাস—“যদি কেউ এখানে এক রাত কাটাতে পারে, তবে সেই জীবন ধন্য হয়ে যায়।”

সোমবার সকাল থেকে বনরক্ষী ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় শত শত তীর্থযাত্রী ট্রলার ও লঞ্চে করে দুবলার চরে পৌঁছান। বুধবার সকালেও একই নিরাপত্তায় তীর্থযাত্রীদের চাঁদপাই ও ধানসিঁড়ি স্টেশনে ফিরিয়ে আনা হয়।

সানি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন জানান, “আমরা ২৫ বছর ধরে এই তীর্থে পর্যটক নিয়ে আসছি। এবারও ঢাকা থেকে ৫০ জন তীর্থযাত্রী লঞ্চে এসেছেন। এবারের উৎসব ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন।”

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “স্থানীয় ও বিদেশি ভক্তদের অংশগ্রহণে রাসমেলা, পূজা ও পুণ্যস্নান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।”

তিনি আরও জানান, রাস উৎসব ঘিরে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ড আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি জলদস্যু ও বনদস্যুদের তৎপরতার দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখে।
কমেন্ট বক্স