ঢাকা | ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

দেশে রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়লেও বিনিয়োগে পড়ছে ভাটা!

প্রকাশের তারিখ: অক্টোবর ৫, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি : দেশে রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়লেও বিনিয়োগে ভাটা পড়ছে। এতে অর্থনীতি কোনোভাবে টিকে থাকলেও শিগগিরই দুর্বল হয়ে পড়বে। স্থবিরতার প্রহর গুনছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, স্থিতিশীল ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সরকার। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি না হলে অর্থনীতি ও ব্যবসা অন্য দেশে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক এজেন্ডা রাস্তায় না নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার হিসাব গুনতে গুনতে পার হয়েছে এক বছর। কোথাও আশা, কোথাও হতাশার চাদর মুড়িয়ে সাধারণ জনগণ চায় সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বঞ্চনা দূর করতে গদবাধা রাজনীতির পরিবর্তন।
 
দেশজুড়ে নির্বাচনী ডামাডোলের নানা হিসাব-নিকেশের মধ্যে যদি নানা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ এবং প্রবাসী আয় প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে একই সময়ে বিনিয়োগ কমেছে ১৫-২০ শতাংশ। অস্থির বিশ্ববাজারে ব্যবসায়ীরা রফতানিতে সম্ভাবনা দেখলেও নতুন বিনিয়োগ পিছিয়ে দিচ্ছেন।
 
বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে থাকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার সুযোগ। পাঁচ বছরের একটি মেয়াদ থাকে, তাই তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারে। তবে এক বা দুই বছর, বা ছয় মাসের জন্য কেউ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করে না। এটাই বাস্তবতা।’
 
এদিকে দেড় দশক ধরে সংকটে থাকা ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবাহও শক্ত লাগামে। রাজনৈতিক সরকারে আস্থা ফিরলে ব্যাংক খাতেও চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
 
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে নতুন কোনো বিনিয়োগ খুব কম দেখা যাচ্ছে। আমরা নতুন বিনিয়োগ করতে চাই, তবে সবাই অপেক্ষা করছে। নির্বাচিত সরকার কোন নীতি গ্রহণ করবে; বিশেষ করে ওপেন মার্কেটের সুদের হার ও বিনিময় হারের বিষয়ে-তার ভিত্তিতে নতুন বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে।’
 
একটি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি চলে এক অপরের হাতে হাত ধরে। অস্থিরতা কাটিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করতে রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
 
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘যখনই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকবে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকবে, বা স্থিতিশীলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ থাকবে, তখন মানুষ বিনিয়োগ করবে না। বিদেশি বিনিয়োগও মূলত দেশীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল। নির্বাচনের সময়মতো আয়োজন হতে হবে, আর অর্থনীতিকে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক মতভিন্নতা থাকলেও আমাদের রাস্তায় আন্দোলনে না নামার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
 
দেশের সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক না থাকায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমে ৯ শতাংশ। সর্বশেষ অর্থবছরে এটি আরও কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। এক বছরে নতুনভাবে বেকার হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
কমেন্ট বক্স