প্রিন্স মন্ডল অলিফ (বাগেরহাট প্রতিনিধি) : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার মেইন রোডে মাইশা প্লাজা নামে ষষ্ট তলা বিশিষ্ট ওই ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে কয়েকটি ব্যাংক, বীমা, সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিক, দোকান এবং শোরুম রয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চিতলমারী ক্যাম্পের একদল চৌকশ সেনা দল পুলিশ এবং ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা ভবন থেকে মধ্য বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া আহত অবস্থায় ৪২ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার ব্রিগেড সূত্রে জানা যায়, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন সেখানে ছুটে আসেন। সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয়রা জানান, চিতলমারী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র মেইন রোডে মাইশা প্লাজা। ষষ্ট তলা বিশিষ্ট এই প্লাজায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া,আইএফআইসি ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্জা ক্লিনিক, দোকান-শোরুম রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয়রা প্লাজা থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখতে পান। মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
চিতলমারী থানার ওসি এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মাইশা প্লাজা নামে ষষ্ট তলা বিশিষ্ট ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে কয়েকটি ব্যাংক, বীমা, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং দোকান-শোরুম রয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারণে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভবন থেকে, মধ্য বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ওই নারী সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের স্টাফ ছিলেন।’
খুলনা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোঃ. মতিয়ার রহমান এবং বাগেরহাট ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, , ‘খবর পেয়ে বাগেরহাট, খুলনা, চিতলমারী, মোল্লাহাট এবং টুঙ্গিপাড়ার ৮টি ইউনিট আগুন নিভানোর কাজে অংশ নেয়। দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে, বেলা ১২টার দিকে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবন থেকে মধ্য বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পঞ্চম তলা বিশিষ্ট ওই বাণিজ্যিক ভবনটির বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তারা ভবনের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আগুনে বাণিজ্যিক ওই ভবনে থাকা সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকে কর্মরত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ষষ্ট তলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তবে আগুনে ওই সব ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফায়ার ব্রিগেড, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীদের সহযোগিতায় দ্রুত আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।’
এদিকে চিতলমারীর ইউএনও তাপস পাল আগুন নেভানোর কাজে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও বাগেরহাটের ডিসি মহোদয় সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন। প্রায় ৫ ঘন্টার প্রচেষ্টায় ভবনের আগুন পুরোপুরি নেভে। হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের চিকিৎসা তত্বাবধায়ন করা হচ্ছে। আগুন লাগার সূত্র তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে নিচতলা হতে আগুন শুরু বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. মোঃ. মুক্তি বিশ্বাস জানান, আগুনের ঘটনায় আহত ৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে পারিজাত (৮) নামক এক শিশুকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে এক নারী মারা গেছে। ঘটনাস্থলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাড. ওহিদুজ্জামান দিপু ও জামায়াত নেতা মোঃ মশিউর রহমান খান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমিনুল হক টুলু ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আহসান হাবিব ঠান্ডু পরিদর্শন করেন।