Sunday, September 22, 2024
Google search engine
Homeদেশঢাকাসড়ক ব্যবস্থাপনায় ফিরবে ‘ফিটনেস’?

সড়ক ব্যবস্থাপনায় ফিরবে ‘ফিটনেস’?

২০১৮ সাল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলে, সড়কে অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার পর নতুন আইন হয়েছে। অব্যবস্থপনা ঠেকাতে ‘সরব’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোও। কিন্তু সড়কে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

পাঁচ বছর পরে সম্প্রতি সরকার পতনের পর পুলিশ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে আবারও সড়কের দায়িত্ব নেন শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করেন। কিন্তু এরপর? আবারও সড়কে বিশৃঙ্খলা। এখন সড়কে অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট চোখে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগে সরকার তড়িঘড়ি করে সড়ক পরিবহন আইন পাস করলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, সরকার ও সরকারের কাঠামো পরিবহন খাতের বিভিন্ন দুষ্টু চক্রে বাঁধা। আর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যুক্তরা বলছেন— ঢাকার রাস্তায় ভিআইপি সংস্কৃতি এবং টাকার বিনিময়ে অবৈধ যান চলাচলের ব্যবস্থা বন্ধ করা না গেলে সুদিন আসবে না। পাশাপাশি মানুষকে নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশে গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। এই হিসাবে প্রতিদিন সড়কে নিহত হয়েছেন তিন জন শিক্ষার্থী। জুলাই মাসে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। এদিকে চলতি বছরের কেবল জুলাই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৫২টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪৮৭ জন এবং আহত ৬৭৯ জন। এর আগে জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৬৪৪ জন।

কেন সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হচ্ছে না প্রশ্নে ঢাকায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তি ‘সিস্টেম’কে দোষারোপ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল এলাকায় কাজ করেছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন— আপনি যখন অবৈধ পার্কিং বলবেন, তখন আপনারতো সেই চালককে পার্ক করার জায়গা দিতে হবে। ১০ শতাংশ গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গা নেই। কাগজ করার প্রক্রিয়া এত জটিল, সেখানে টাকা দিয়ে ফিটনেস নিয়ে আসেন। আমি দেখতে পাচ্ছি— গাড়ির ফিটনেস নেই, কিন্তু কাগজতো বৈধ, করণীয় কী? তখন আমারও টাকা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কারোর প্রতি কারোর সম্মানবোধ আর নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়কে বিশৃঙ্খলা করায় ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলেও কোনও কাজে আসছে না। মামলা বেড়েছে, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ না হলেও কমেছে। কিন্তু যানজট কমছে না।

ভিআইপি নেই তবু যানজট
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের সিগন্যালে১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কেন সিগন্যাল ছাড়ছে না। উল্টো দিক থেকে একটা পাজেরো পার হয়ে যাওয়ার পরে ছাড়া হলো সিগন্যাল। ‘ভিআইপি’ পার হবে বলে খালি রাস্তাতেও সিগন্যাল আটকে রাখা হলো। ৫ আগস্টের পরে ঢাকায় ভিআইপি গাড়ি নেই। কিন্তু সড়কে কেন ফিরছে না শৃঙ্খলা, জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ফিরবে কীভাবে? এভাবে রাস্তায় যদি ভিআইপি নন ভিআইপি বলেন, মানুষ আইন মানবে কেন? দায় চালক কিংবা পরিবহন সেক্টরের মানুষদের বেশি। কিন্তু পথচারী বা যাত্রীদের কি কোনও দায় নেই? ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও পুরো শহরজুড়ে রাস্তা পারাপার করে, নিজের প্রাণের ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ির গতি কমিয়ে দিচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীরা কীভাবে পারে
৯ আগস্টের ঘটনা। রাজধানীর আগারগাঁও মোড়ে কিছু কিশোর-তরুণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি থামাচ্ছেন, ছাড়ছেন। মোটরসাইকেল আরোহীর হেলমেট না থাকলে অথবা ট্রাফিক আইন না মানলে, জবাবদিহির মুখোমুখি করছেন। সিটবেল্ট না লাগানো থাকলে গাড়ি থামিয়ে সেটা পরতে বাধ্য করছেন। রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করলেন যে সময়, সেসময় কাউকে উল্টোপথে গাড়ি চালাতে দেখা যায়নি। এমনকি সিগন্যাল ছাড়ার আগে কেউ হুট করে পার হওয়ারও চেষ্টা করেননি। এর মধ্যে কেউ যদি শৃঙ্খলা না মানেন, তাদের দাঁড় করিয়ে রাখা, পরের কেউ ভুল না করা পর্যন্ত ট্রাফিক সামলাতে জরিমানা করার মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে।

কেন শিক্ষার্থীরা নিয়ম মানতে বাধ্য করতে পারছেন, আর ট্রাফিক পুলিশের কষ্ট হচ্ছে, প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার জোর অনেক বড়। যে আইন প্রয়োগ করবে তার ‘ইমেজ’ থাকতে হবে। মানুষ জানে পুলিশ ম্যানেজেবল, তাই তাদের কথা শুনতে চায় না। এখন আমাদের দরকার ট্রাফিক পুলিশ যে কারণে বিশৃঙ্খল, তা রিফর্ম করা। সিস্টেম ধরে বদলাতে হবে। রাস্তার সিগন্যাল পুলিশ দিয়ে না সামলে কীভাবে বিজ্ঞান দিয়ে সামলানো যায়, তা ভাবতে হবে। রাস্তায় অবৈধ গাড়ি চললে, সিগন্যাল না মানলে সয়ংক্রিয়ভাবে তাকে ধরার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুলিশ এসব করতে চেয়ে একটার পর একটা প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু কেন বাস্তবায়ন করেনি, সে জবাবদিহি চাইতে হবে।’’

আইন বাস্তবায়ন হবে?
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘রাস্তায় গাড়ি থাকলে ‘দুর্ঘটনা’ ঘটবে। কিন্তু একের পর এক আমরা নিহতের উদাহরণ দিতে পারবো, যা কিনা অব্যবস্থাপনার কারণে হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনার সঙ্গে নানা কিছু জড়িত। একদিকে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, আরেক দিকে সড়কে চাঁদাবাজির কারণে সৃষ্ট অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা। যে পুলিশ আইন মানতে বলে তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, সে আইন প্রণয়ন করবে কীভাবে? নতুন আইন পাস করা হলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। নতুন এই আইনের অনেক অসঙ্গতি সংশোধনযোগ্য। পুলিশ যদি অনিয়ম বন্ধ করে দেয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর কতদিন
সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনের সংখ্যা কত এবং তার মধ্যে বৈধ ও অবৈধ যানবাহন কত, তার সঠিক তথ্য সরকারি-বেসরকারি কোনও সংস্থা বা সংগঠনের কাছে নেই। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে ৫-৬ লাখের বেশি গাড়ি ফিটনেসবিহীন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। কৌশলে এসব গাড়ির নিবন্ধন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র বলছে, নিবন্ধিত যানবাহনের বাইরেও সড়কে চলাচল করা গাড়ির মধ্যে একটি বড় অংশই ফিটনেসবিহীন ও চলাচলের অনুপযোগী। অনিবন্ধিত এই যানবাহনের সংখ্যা কত, সেই তথ্যও যখন বিআরটিএ’র কাছে নেই, তখন ফিটনেসবিহীন গাড়ির পরিমাণ কত, সে তথ্য না থাকাটাই স্বাভাবিক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments