বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১৭ অক্টোবর ২০২৪ !! ১৩:১০
বেড়েছে সোনা চোরাকারবারিদের তৎপরতা। বিশেষ করে দুবাইকেন্দ্রিক চোরাকারবারিদের তৎপরতা আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে ট্যাক্স পরিশোধ করে প্রায় ১ হাজার কেজি সোনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্যাক্স পরিশোধ করেই এই বিপুল পরিমাণ সোনা আনা হয়েছে। এর বাইরেও চোরাইভাবে কত সোনা আনা হয়েছে তার কোনও হিসাব নেই। ট্যাক্স পরিশোধ করে বৈধভাবে সোনা আনলে সোনার দাম কমতো, কিন্তু এগুলো দেশে থাকছে না, পাচার হচ্ছে অন্য দেশে।
বিমানবন্দরের কাস্টমসের পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২০ টাকা। আগস্ট মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৪২৮ টাকা, আর গত সেপ্টেম্বর মাসে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে শুধু সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫ টাকা।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিটি সোনার বারের ট্যাক্স ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৮ হাজার ৩৮টি বার এসেছে। প্রতিটি বারের ওজন ১১৭ গ্রাম। সেই হিসাবে ৯৪০ কেজির কিছু বেশি সোনা দেশে এসেছে।
এদিকে, একই সময়ে অলংকার বাবদ জুলাই মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫১ টাকা, আগস্ট মাসে আসে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ২৯৪ টাকা। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে আসে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে অলংকারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৫ টাকা।
সূত্র জানায়, সোনার বার আর অলংকার মিলিয়ে গত তিন মাসে প্রায় ১ হাজার কেজির কাছাকাছি সোনা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।
বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আল-আমিন বলেন, সোনা পাচার হয়ে যায় বলে আগে ট্যাক্সসহ ২টি সোনার বার আনার অনুমতি ছিল। সেটি কমিয়ে ১টি সোনার বার করা হয়েছে। এখন কোনও প্রবাসী বা কোনও যাত্রী যদি একটি সোনার বারের ট্যাক্স পরিশোধ করে বাইরে নিয়ে যান, এক্ষেত্রে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমাদের বিষয়টি হলো— তিনি কাস্টমস হলে সোনার বিষয়টি ডিক্লেয়ার (ঘোষণা) করেছেন। কর পরিশোধ করেছেন, সুতরাং তিনি বৈধভাবে নিয়ে যেতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক যাত্রী যদি একটি করে সোনার বার নিয়ে আসেন তারা ট্যাক্স পরিশোধ করার বিষয়টি পর্যন্তই আমাদের কাজ। পরবর্তীতে তিনি ওই বার কী করলেন বা কী কাজে ব্যবহার করলেন এটা আমাদের বিবেচ্য না। এটি দিয়ে যদি কোনও অপরাধ বা দেশের বাইরে পাচার করে বা করতে চায় সেটি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর বিষয়।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বলেন, যে পরিমাণ সোনা দেশে ঢুকছে সেগুলো দেশে থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো, আমরা কম দামে সোনা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এগুলো চোরাকারবারির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে এত সোনা থাকলে নিশ্চয়ই দামও কমতো।
সোনা চোরাচালানের রুট
সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রুট ব্যবহার করে স্বর্ণ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে সোনার চালানগুলো দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী হয়ে দেশে নিয়ে আসে। পরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সেগুলো বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেগুলো বেনাপোল ও ভোমরা, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত হয়ে ভারতে চলে যায়।
এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ভারতে এখন অলংকার প্রস্তুতকারী ছাড়া কেউ সোনা আমদানি করতে পারে না। অথচ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তা শুধু গয়না প্রস্তুতকারীদের পক্ষে আমদানি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মেটাতে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি মাদকের দাম মেটাতেও সোনা ব্যবহার করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের উপমহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, সোনাসহ যেকোনও চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে চোরাচালান রোধে আমাদের সীমান্তগুলোতে নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।