Wednesday, November 13, 2024
Google search engine
বাড়িদেশবিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মোটা অঙ্কের অর্থে বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া-ফাসিপাড়ায় ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে চারটি ঘর। সরকারি ঘর পাওয়ার সাত মাসের মাথায় বিক্রি করে উপকারভোগীরা চলে গেছেন নিজ বাড়িতে। এখন আরও কয়েকটি ঘর বিক্রির দেনদরবার চলছে। গৃহহীনদের না দিয়ে ধনীদের দেওয়ায় ঘরগুলো বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া ও ফাসিপাড়া গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে উপহার দেওয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের তত্ত্বাবধানে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঘরগুলো ২১ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এরপর লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার ভূমিহীন-গৃহহীনদের মাঝে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ধনী ব্যক্তিরা। তারা ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো বিক্রি করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন নুরুন্নাহার বেগম। তার নিজস্ব বাড়ি আছে। কয়েকদিন আগে স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফের কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ঘরটি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। একই প্রকল্পে ৪১ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন মো. নূর হোসেন। তারও বাড়ি আছে। ফলে ওই এলাকার দিনমজুর মো. সুমন মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকায় ঘরটি বিক্রি করেছেন। ৫১ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন সোনিয়া বেগম। তার কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ঘরটি কিনেছেন জহিরুল ইসলাম। ৫৩ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন শহীদ ফকির। তার নিজস্ব বাড়ি থাকায় প্রতিবেশী আশাদুল ব্যাপারীর কাছে এক লাখ টাকায় সরকারি ঘরটি বিক্রি করে দিয়েছেন।

ঘর বিক্রির বিষয়ে নুরুন্নাহার বেগম ও নূর হোসেন জানিয়েছেন, তারা ঘরটি বিক্রি করেননি, বরং অন্যকে থাকতে দিয়েছেন। তবে ঘর কেনার কথা স্বীকার করেছেন হানিফ ও সুমন মিয়া।

এ ছাড়া ১১ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন আব্দুস ছালাম। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগমের কাছে ঘরটি ভাড়া দিয়েছেন বলে জানালেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

তবে ফেরদৌসী বেগম ভাড়া নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ছেলেমেয়ের পরীক্ষা থাকায় ঘরের মালিক ছালাম গ্রামের বাড়িতে গেছেন। পরীক্ষা শেষ হলে আবার এসে থাকবেন। আপাতত আমরা তার ঘরে থাকছি।’

৫৪ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন হেমায়েত উদ্দিন। তিনি নিজস্ব বাড়িতে চলে গেছেন। একই এলাকার দিনমজুর ফেরদৌস ও পাখি বেগম দম্পতিকে তার ঘরে থাকতে দিয়েছেন।

প্রকল্পের ২৪ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন হতদরিদ্র নুরভানু। তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ সুযোগে মহিপুর ইউনিয়নের সাবেক ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম লাখ টাকা নিয়ে বেলাল হোসেনকে ঘরটি দিয়েছেন। বেলাল এখন ওই ঘরে থাকছেন। তবে লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বেলাল।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা টাকা নিয়ে কিছু ঘর ধনীদের দিয়েছেন। তাদের নিজস্ব বাড়ি থাকায় এখন সরকারি ঘরগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় নয়াপাড়া ও ফাসিপাড়ায় ৬৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কাজ নিম্নমানের হওয়ায় অনেক ঘরের চাল দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। অধিকাংশ ঘরের পলেস্তারা খসে পড়ছে। উঠে গেছে দেয়ালের রঙ। নেই খাবার ও রান্নার পানির ব্যবস্থা। তৈরি হয়নি চলাচলের রাস্তা। বৃষ্টি হলেই ঘরের সামনে জমে পানি। কাদায় একাকার হয়ে যায় পথ। রোদে চাল গরম হলে কষ্ট পেতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানালেন উপকারভোগীরা।

৪৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সাথী আক্তার বলেন, ‘আমার ঘরে ওঠার সময় পেছনের একটি দরজা ও সামনের একটি জানালা ভাঙা অবস্থায় পেয়েছি। আবার ঘরের পেছনের জানালা ছিল না। এখনও রাস্তা তৈরি হয়নি। পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। এখানে বসবাস করতে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছি আমরা।’

৪৭ নম্বর ঘরের উপকারভোগী মো. তারেক হোসেন বলেন, ‘ঘর নির্মাণকাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় আমাদের এই ভোগান্তি। দেয়ালের রঙ উঠে গেছে, ‍বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ঘরে। যাতায়াতের রাস্তা নেই।’

একই ভোগান্তির কথা জানিয়ে ৫৯ নম্বর ঘরের উপকারভোগী লালবরু বলেন, ‘আমরা শুধু একটা ঘর পেয়েছি। চলাচলের কোনও রাস্তা নেই। ঘরের সামনে পানি জমে থাকে সবসময়। অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ঘর বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ ঘর বিক্রি করলে তার বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত গৃহহীনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকারি এসব ঘর বিক্রির কোনও সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো আমরা।’

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments