বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ !! ১৯:৩০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহতের ভাই মো. বেহেস্তি (৩৫) বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জুবেরী অফিসার্স কোয়ার্টার্স থেকে তার স্কুটিতে নবজাতক সন্তান ও অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ আনতে মতিহার থানাধীন বিনোদপুর বাজারের ফার্মেসিতে যান। সেখানে অজ্ঞাত কেউ বা কারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে অনুসরণ করে। পরে তাকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিনোদপুর বাজার থেকে অজ্ঞাত কেউ বা কারা কৌশলে তাকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মাসুদকে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানাধীন অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে উপর্যুপরি প্রহার করে। মাসুদের অবস্থা মুমুর্ষূ হয়ে পড়লে এক ব্যক্তি মতিহার থানায় খোঁজ নিতে আসে যে, রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কোনও হত্যা মামলা হয়েছে কিনা। মতিহার থানায় কোনও হত্যা মামলা না থাকায় ওই ব্যক্তির নির্দেশনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ও উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মাসুদকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানোর জন্য থানায় নিয়ে যায়।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে এক ছাত্র সমন্বয়কের নেতৃত্বে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মাসুদকে ঘিরে ফেলে। উত্তেজিত ছাত্র-জনতা কর্তৃক তাকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারিত হয়। ওই বহুল প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাকে এক সমন্বয়কের নেতৃত্বে বিনোদপুর বাজারের স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহায়তায় অটোরিক্শা থেকে নামিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ফ্লোরে রাখা হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তিনি এক গ্লাস পানির জন্য আকুতি-মিনতি করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্র-জনতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে পানি পান করানো থেকে বিরত রাখে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, মৃত্যুর মুখে পতিত মাসুদকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে তাকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য উত্তেজিত ছাত্র-জনতা বোয়ালিয়া মডেল থানা ঘেরাও করেন এবং ওসির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায়। পরে ওসি তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত মাসুদের এক্সরে করেন এবং ৩১নং ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স তাকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ৩ মিনিটে হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে তিনি মারা যান।
অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে বেধড়ক মারধর করে তার মৃত্যু ঘটায়। অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ইতোপূর্বে ২০১৪ সালেও তাকে মারধর করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তখন থেকেই অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে আসছিল।
থানা সূত্রে জানা যায়, পেনাল কোড-১৮৬০-এর ৩০২/৩৪ ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলার নাম্বার ০৮।
মামলার বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ কেন্দ্রীয় ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি রাবি মেডিক্যাল সেন্টারের স্টোর কিপার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী অফিসার্স কোয়ার্টার্সে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।