Friday, November 22, 2024
Google search engine
বাড়িদেশচট্টগ্রামচট্টগ্রাম বন্দরে কড়া নজরদারিতেও জাহাজে চুরি-ডাকাতি

চট্টগ্রাম বন্দরে কড়া নজরদারিতেও জাহাজে চুরি-ডাকাতি

বাংলার প্রতিচ্ছবি । ৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ । ১০:৪৬

চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় জাহাজে চুরি–ডাকাতি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল বছর দেড়েক আগে। এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত জেটি ও বহির্নোঙরে ছয়টি জাহাজে চুরি–ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে বন্দরের তথ্যে বলা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে জেটি ও সাগরে অবস্থানরত জাহাজে নজরদারি আরও বাড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বন্দরের একটি সেল থেকে ওয়াচম্যান বা পাহারাদার জাহাজে নিয়োগ দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে শিপিং এজেন্টরা খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলে তাতে আপত্তি জানিয়েছেন।  

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত ছয়টি জাহাজে চুরি–ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এমভি জাফর হানিফ, ২৪ মে এমটি সাকসেস, ৭ জুন এনসিসি মেসিলা, ৮ জুন টিম ফোকাস এবং ৪ জুলাই এমটি ওরিয়ন এক্সপ্রেস ও মেলিনা জাহাজে চুরি–ডাকাতি হয়। বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে শিপিং এজেন্টদের কাছে পাঠানো চিঠিতে চুরি–ডাকাতির এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

বন্দরের চিঠিতে চুরি–ডাকাতির তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য বন্দরে আগত জাহাজে বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়াচম্যান বুকিং সেল থেকে ওয়াচম্যান নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে জাহাজের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া দরকার। এ জন্যই শিপিং এজেন্টদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।  

অবশ্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের সেল থেকে ওয়াচম্যান নিয়োগ দিলে প্রতিটি জাহাজের জন্য প্রতিদিন খরচ হবে ৮৯–১০৮ ডলার (৯,৮০০–১১,৭৭২ টাকা)। কোনো জাহাজ যদি ১৫ দিন বা এক মাস বহির্নোঙরে থাকে, তাহলে খরচ হবে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা। আবার বন্দরের যে সেল রয়েছে, সেটি বেসরকারি খাতের। এখন বন্দরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাহারাদার সরবরাহ করছে, যেখানে খরচ অনেক কম। নিয়ন্ত্রণও থাকে শিপিং এজেন্টদের কাছে।

আপত্তি জানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন্দর যদি নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়, তাহলে সেটা নিজস্ব কর্মী দিয়ে করুক। প্রজ্ঞাপন জারি করে মাশুল আদায় করলেও আপত্তি নেই আমাদের। এভাবে বন্দরের ওয়াচম্যান সেল থেকে (বন্দরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের কর্মী) দিয়ে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।’

বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিপিং এজেন্টরা জাহাজে পাহারাদার নিয়োগ দিলে যে খরচ হবে, তা পরিশোধ করবেন জাহাজের মালিকেরা, যার সিংহভাগই বিদেশি কোম্পানি। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।

অন্যদিকে শিপিং এজেন্টের নেতারা বলছেন, বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা ভিটিএমআইএসের মাধ্যমে সচিত্র তদারক করা হয়। আবার জেটিতে রয়েছে নানা স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ রকম কড়া নজরদারির মধ্যেও জাহাজে চুরি–ডাকাতির ঘটনা কারা ঘটায় তা খতিয়ে দেখা দরকার।  

বিশ্বে দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী দুটি সংস্থা জাহাজে চুরি–ডাকাতির ঘটনা রেকর্ড করে থাকে। একটি হল ‘দ্য রিজিওনাল কো–অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট অন কমব্যাটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি অ্যাগেইনেস্ট শিপস ইন এশিয়া’ বা রিক্যাপ এবং আরেকটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো বা আইএমবি।

সংস্থা দুটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি চুরি–ডাকাতির ঘটনা বা ঘটনার চেষ্টা হয়েছে ২০১৪ সালে। ওই বছর জাহাজে ১৬টি চুরি–ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ ও ২০২১ সালে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০২২ সালে বাংলাদেশের জলসীমায় পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামে তিনটি ঘটনা ঘটেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বছর ছয় জাহাজে চুরি–ডাকাতির ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। যদিও সংস্থা দুটি শুধু এমটি সাকসেস জাহাজের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। অন্য ঘটনাগুলো তাদের হিসাবে নেই।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments