বাংলার প্রতিচ্ছবি । ১১ আগষ্ট ২০২৪ !! ০৮:০১
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন খুলনা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সাবেক চার এমপি। তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। বাড়িতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এদিকে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কর্মীরা। হামলার ভয়ে অনেকে রাতে বাড়িতে থাকছেন না। শহরজুড়েই চলেছে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। সংবাদকর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। খুলনা প্রেসক্লাবেও অগ্নিসংযোগ-লুটপাট করা হয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়িতে গত ৪ আগস্ট বিকালে দুই দফা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর পরদিন ভোরে বাড়ি ছাড়েন তিনি। এখন কোথায় আছেন, তা বলতে পারছেন না কেউই।
জেলার সদ্য সাবেক এমপি খুলনা-১ আসনে ননী গোপাল মণ্ডলের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ। স্থানীয়রা জানান, তিনি দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামের বাড়িতে নেই। খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বাড়ি মহানগরীর শেরেবাংলা রোডে। ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত বাড়িটিতে গত ৪ ও ৫ আগস্ট কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়। এর আগে থেকেই ওই বাড়িতে নেই জুয়েল ও তার তিন ভাই। এছাড়া খুলনা-৩ আসনের বিদায়ী সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের খালিশপুর এলাকার অফিস ভাঙচুর হয়েছে গত ৫ আগস্ট। তিনি কোথায় আছেন তা জানে না স্থানীয়রা। এলাকা ছেড়েছেন খুলনা-৫ আসনের এমপি সদ্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দও। গত ৫ আগস্ট তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার পর এলাকা ছাড়েন তিনি। খুলনা-৪ আসনের এমপি শিল্পপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী ঢাকায় এবং খুলনা-৬ আসনের মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল কয়রা উপজেলায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ অসুস্থ। তিনি বাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, স্থানীয় জেলা পরিষদ ভবনে ৬ আগস্ট রাতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানাকে গত ৪ আগস্ট দলীয় কার্যালয় চত্বরে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আন্দোলনকারীরা। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রয়েছেন। আর ৫ আগস্ট হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে নগরীর ট্যাংক রোডে তার বাড়িতে। এছাড়া আত্মগোপনে রয়েছেন খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মো. আকতারুজ্জামান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর বেশির ভাগ নেতাকর্মী।
এদিকে সংবাদকর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। খুলনা প্রেসক্লাবেও হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। গত ৪ আগস্ট কর্মরত অবস্থায় মাছরাঙা টিভির আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও লাঞ্ছিত করা হয়। মাছরাঙা চ্যানেলের টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর ও ক্যামেরাম্যান মো. শাহজালাল মোল্লা মিলনকে মারধর করা হয়। যমুনা টিভির খুলনা প্রতিনিধি প্রবীর কুমার বিশ্বাসের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। ৬ আগস্ট আরটিভির খুলনা প্রতিনিধি এস এম মনিরুজ্জামানের (মীর মনির) বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এশিয়ান টিভির মো. বাবুল আকতারের প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়। ৬ আগস্ট বিএল কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি এম ওয়াহিদুজ্জামানকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়। দৈনিক খুলনা’র অফিসে ৬ আগস্ট রাতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে৷ আনন্দ টিভির খুলনা প্রতিনিধি আমজাদ আলী লিটনের বাসায় ৫ আগস্ট হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ৬ আগস্ট দৈনিক দেশসংযোগ পত্রিকা অফিসে হামলা ও ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে। বাংলা টিভি’র খুলনা ক্যামেরাপার্সন জালালের বাসায় ৫ আগস্ট ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। ৪ ও ৫ আগস্ট খুলনা প্রেস ক্লাবে হামলা, অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করা হয়েছে।