প্রিন্ট এর তারিখঃ Jul 7, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 7, 2025 ইং
ইউরোপীয় পণ্যতে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি , বিশ্ববাজারে অস্থিরতা

বাংলার প্রতিচ্ছবি : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে ঘিরে। হোয়াইট হাউস সূত্র বলছে, আজ সোমবার (৭ জুলাই) ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়েই ঘোষণা আসতে পারে আজ। যদি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক দুই অংশীদার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, এর মধ্যে নতুন করে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে।
সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। ২০২৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে পণ্য ও সেবা লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪.৬ বিলিয়ন ইউরো। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে রপ্তানি করে তেল, ওষুধ, বিমান ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মতো পণ্য। অন্যদিকে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায় বিলাসবহুল গাড়ি, বিমান, রাসায়নিক, ওষুধ ও ওয়াইন-স্পিরিটস।
তবে এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভারসাম্য একপেশে। ইউরোপের সঙ্গে পণ্য বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৯৮ বিলিয়ন ইউরো, যদিও সেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা এগিয়ে থাকায় সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়ায় ৫০ বিলিয়নের মতো।
এমন এক পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ইইউ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে পণ্যের দাম বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই এর বোঝা বহন করতে হবে।
জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ-বেঞ্জ এখনো দাম বাড়ায়নি, তবে ভবিষ্যতে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইতালির বিখ্যাত মদ প্রস্তুতকারক ক্যাম্পারি গ্রুপ জানিয়েছে, প্রতিযোগীরা দাম বাড়ালে তাদেরও দাম ধরে রাখা কঠিন হবে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, এই শুল্কনীতি আমেরিকায় উৎপাদন ফিরিয়ে আনবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে। যদিও বাস্তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া। ফ্রান্সভিত্তিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের সিইও জানিয়েছেন, যদি শুল্ক বাড়ে, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হবেন।
বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এই বাণিজ্যনীতির নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুয়েজেলের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে যেতে পারে ০.৩ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কমতে পারে ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সমঝোতা না হলে বর্তমান ১০ শতাংশ ভিত্তিক শুল্ক বহাল থাকবে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে গাড়ি, রেল ও ইস্পাত খাতে অতিরিক্ত শুল্ক।
সমঝোতার সম্ভাবনার বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো কিছু পণ্যে ছাড় দিতে পারে, আর ইউরোপ তার খাদ্য ও কৃষিপণ্যে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করতে পারে। তবে সবশেষে যাদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে, তারা হলো সাধারণ ভোক্তা যাদের জন্যই এসব পণ্য বাজারে আসে।
বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক শক্তির এই দ্বন্দ্ব কোন দিকে গড়ায়, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে যেভাবেই শেষ হোক না কেন, এর রেশ গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের ওপর।
প্রকাশক : ফারুক শিকদার
সম্পাদক : হিল্লোল বাউলিয়া
অফিস : যোগাযোগ: ৩০৫, জহর টাওয়ার, এলিফ্যান্ট রোড,নিউমার্কেট, ঢাকা-১২০৫
ইমেইল : banglarproticchobi@gmail.com
মোবাইল : ০১৬৩৩৬০৭২৫৫, ০১৮৪৮- ১২৭৩৯২
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ বাংলার প্রতিচ্ছবি