প্রতিদিনের বাংলার প্রতিচ্ছবি : বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছাড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ ডলারের মাইলফলক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৪২ দশমিক ০৯ ডলারে, যা দিনের শুরুতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ৩ হাজার ৬৫৯ দশমিক ১০ ডলারে।
আর ডিসেম্বরে সরবরাহের জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬৮২ দশমিক ১০ ডলারে।
২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছিল। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়া এবং বন্ড ইল্ড কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। একই সঙ্গে, চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাবে-এমন প্রত্যাশা ও বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক সঞ্চয়, আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা এবং ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা- সব মিলিয়েই এই ধাতুর দামকে আরও শক্তিশালী করেছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বাজারের প্রত্যাশা অনুযায়ী একাধিকবার সুদের হার কমায়, তাহলে স্বর্ণের দামে সামনে আরও ঊর্ধ্বগতি দেখা যেতে পারে।’
এর আগে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হঠাৎই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বেকারত্বের হার প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছায়। এতে স্পষ্ট হয় যে শ্রমবাজারের অবস্থান নরম হচ্ছে এবং আগামী সপ্তাহে ফেডের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে।
সিএমই গ্রুপের ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের ধারণা-চলতি মাসের বৈঠকে ফেড ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা ধরা হচ্ছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।
এদিকে, নিম্ন সুদের হার ডলার ও বন্ড ইল্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, আর সেটিই অ-ইল্ডিং সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে ডলার সূচক প্রায় সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যা অন্যান্য মুদ্রাধারীদের জন্য স্বর্ণ কেনাকে আরও লাভজনক করে তুলছে। একই সঙ্গে মার্কিন ১০ বছরের ট্রেজারি ইয়েলও পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবারের (১১ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলেই বাজারে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিমালা সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পেতে বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন বুধবারের মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI) এবং বৃহস্পতিবারের ভোক্তা মূল্য সূচক প্রকাশের দিকে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘যদি এই সপ্তাহে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির তথ্য প্রত্যাশার চেয়ে কম আসে, তবে সেটি স্বল্পমেয়াদে বড় ধরনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এতে ফেড সেপ্টেম্বরে সুদের হার কমানোর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলারের দিকে পৌঁছানোর সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠবে।’
অন্যদিকে, রুপার বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। স্পট সিলভারের দাম আউন্সপ্রতি ৪১.৩২ ডলারে স্থির ছিল। প্লাটিনামের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯০ দশমিক ৮০ ডলার। আর প্যালাডিয়ামের দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১ হাজার ১৪৭ দশমিক ০৭ ডলারে।