শ্যামনগর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাল ভোটের অভিযোগ ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শ্যামনগর পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শেখ লিয়াকত আলী, বিএনপি কর্মী আনোয়ার-উস-শাহাদাত মিঠু ও বাবু।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শ্যামনগর পৌর সদর নকিপুর এইচসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌর বিএনপির ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন উপলক্ষে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ড ভিত্তিক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
ভোট গ্রহণ চলাকালে হঠাৎ করেই ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় একশ'র বেশি জাল ভোটারের নাম যুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপস্থিত একটি পক্ষ ভোটগ্রহণ স্থগিতের দাবি তোলে। অভিযোগে বলা হয়, জাল ভোটারদের মাধ্যমে কাউন্সিলের ফলাফল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উপস্থিত দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশেক ইলাহী মুন্নার অনুসারীরা শেখ লিয়াকত আলীর ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে মিঠু ও বাবুও হামলার শিকার হন।
আহতদের মধ্যে মিঠুর মাথায় প্লাস্টিক পাইপের আঘাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাকির হোসেন জানান, মিঠুর মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেখ লিয়াকত আলী বলেন, "আমি জাল ভোটের প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে রয়েছে কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জেলা বিএনপির কিছু নেতা এবং উপজেলা বিএনপির একটি প্রভাবশালী পক্ষ।" তিনি আরও বলেন, "তারা চায় নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে, তাই সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।"
তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক টিম প্রধান তাসকিন আহমেদ চিশতি, জেলা আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ পলাশ ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কাউন্সিল ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।”
স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে এমন সহিংসতা দলের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান কোন্দলেরই প্রতিফলন। এতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক নেতাকর্মী।
শ্যামনগরের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়ানো এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। আগামী দিনে বিএনপির সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে দলীয় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে সাধারণ কর্মীদের পক্ষ থেকে।