বাংলার প্রতিচ্ছবি : ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কের প্রবেশর রাস্তার একাংশ দেবে গেছে। ফেটে গেছে পাশের গাইডওয়ালও। এতে পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে মাধবকুণ্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে বনবিভাগ অভ্যন্তরীণ রাস্তাটি মেরামত করে সাময়িক চলাচল উপযোগী করেছে। ঈদে মাধবকুণ্ডে আগত পর্যটকদের সতর্কতার সঙ্গে সৌন্দর্য উপভোগের আহ্বান জানিয়েছে বনবিভাগ।
এছাড়া পর্যটকদের সতর্কতা স্বরূপ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে একইস্থান বেশ কয়েক ফুট নিচের দিকে দেবে গিয়েছিল। পরে কর্তৃপক্ষ তা মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে জলপ্রপাতে (কুণ্ডস্থল) যাওয়ার রাস্তাটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ফের রাস্তাটি দেবে যেতে পারে। এতে সংশ্লিষ্টরা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করছেন।
জানা গেছে, ২৮ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বড়লেখায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল নামে। এতে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঝর্ণা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে যাওয়ার রাস্তার প্রায় ৩৫ মিটার স্থান নিচের দিকে দেবে যায়। রাস্তা ছাড়াও পাশের গাইডওয়ালেও ফাটল দেখা দেয়। তবে স্থানীয় বনবিভাগ রাস্তার দেবে যাওয়া অংশে ইতিমধ্যে বালুর বস্তা ফেলে তা মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের পর্যটন রেস্তোরার সামনের রাস্তার একাংশ দেবে গেছে। গাইডওয়ালও ফেটে গেছে। বেঁকে গেছে রাস্তার পাশের রেলিং। বনবিভাগ রাস্তাটির দেবে যাওয়া অংশ মেরামত করে সেখানে সতর্কতামূলকভাবে লাল পতাকা টাঙিয়েছে। জলপ্রপাতে নামার সিঁড়ির নিচের মাটি অল্প অল্প করে সরে যাচ্ছে। এতে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় নিচের দিকে ধসে পরে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। যার কারণে পর্যটক সমাগম কমে গেছে।
মাধবকুণ্ডে সিরাজগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম, আশিক হাসান, আছের উদ্দিন ও রনি আহমেদ বলেন, তারা সবাই শিক্ষার্থী। এখানে তারা প্রথমবার ঘুরতে এসেছেন। মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত ও প্রকৃতি খুবই মনোমুগ্ধকর। তবে জলপ্রপাতের রাস্তা দেবে যাওয়ার বিষয়টা তারা জানতেন না। এখানে এসে দেখেছেন। অনেক দূর থেকে আসায় বেশ ঝুঁক নিয়েই রাস্তা পার হয়েছেন।
স্থানীয় ক্যামেরাম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, কয়েকদিন আগে ভারি বৃষ্টি ও ঢলের কারণে জলপ্রপাতের যাওয়ার রাস্তা দেবে যায়। বর্তমানে এটি মেরামত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ঈদের সময়। এই সময় আমাদের একটু আয় হয়। তবে কয়দিন ধরে পর্যটকরা খুব কম আসছেন। তবে ঈদে পর্যটকের সমাগম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের এসআই সুমন সিংহ বলেন, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে আমরা পর্যটকের নিরাপত্তায় কাজ করছি। ভারি বর্ষণে রাস্তা কিছুটা দেবে গেলেও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি।
বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক মো. রেজাউল মৃধা জানান, টানা চার দিনের ভারি বর্ষণ আর প্রবল পাহাড়ি ঢলে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ও ইকোপার্কে যাওয়ার রাস্তাটির প্রায় ৩৫ মিটার স্থান দেবে গেছে। এর আগেও একইস্থান দেবে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে দেবে যাওয়া স্থানে বালুর বস্তা ফেলে মেরামত করে পর্যটকের চলাচল উপযোগী করেছেন। বিষয়টা তিনি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানিয়েছেন। তিনি ঈদের ছুটিতে আগত পর্যটকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা ও সৌন্দর্য উপভোগের আহ্বান জানিয়েছেন।